গণরুম সংকট: এবার উপাচার্যের দ্বারস্থ সেই ডাকসু নেতা

গণরুম সমস্যা সমাধানে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য তানবীর হাসান সৈকত। যাতে তিনি ছয়টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। বৃহস্পতিবার বিকালে উপাচার্য কার্যালয়ে এই স্মারকলিপি দেন তিনি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯২১ সালে অক্সফোর্ডের আদলে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। প্রশাসনের দায়িত্ব প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা। কিন্তু দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রশাসন এ কাজে নিদারুণ ব্যর্থ। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল আছে মোট ১৮টি। কিন্তু ঘুণে ধরা ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যাথা নেই। গণরুমের মত কৃত্রিম সমস্যা তৈরীর পুরো দায়ভার প্রশাসনের। গণরুম যতটা না রাজনৈতিক কারনে তার চেয়েও বেশি প্রশাসনিক কারনে।

কারণ প্রশাসন চাইলেই পর্যাপ্ত হল তৈরী করে আবাসন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আবাসনে সংকট রেখে প্রশাসন যেমন তরুণ শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে বাধ্য করছে তেমনি নষ্ট করছে তাদের সম্ভাবনাময় মেধাকে। এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে কিছু চাটুকার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের তাগিদে ব্যবহার করছে রাজনীতিকে এবং করে চলছে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় দেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করে আসছে সেখানে আজ রাজনীতিকে নষ্ট করছে কিছু স্বার্থান্বেষী। আর এদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে নাটের গুরু প্রশাসন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ৮-১০ জনের রুমে যখন পর্যাপ্ত সিটের অভাবে ৩০-৪০ থাকে তখন সেখানে যেমন ঘুমানো যায় না, তেমনি পড়ালেখাও হয়না। হলগুলোতে নেই পর্যাপ্ত রিডিং রুমও। ছারপোকার উপদ্রব, মশা আর পরিচ্ছন্নতার অভাবে সৃষ্ট বিভিন্ন রকম রোগ-বালাই। ফলে ধীরে ধীরে পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যায় শিক্ষার্থীরা। হতাশ হয়ে অনেকে নেয় মাদকের আশ্রয়। জ্ঞান উৎপাদনের বদলে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা দেয় জ্ঞানশূন্যতা। গণরুমে পঁচতে থাকা এ প্রজন্ম যখন দেশের হাল ধরবে তখন দেশ যে ভুল পথে এগোবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অন্যদিকে রাজনীতিও বিষিয়ে উঠবে অযোগ্য লোকদের ব্যক্তিস্বার্থের দ্বন্দ্বে।

তাই আপদকালীন সংকট সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে তিনি ছয়টি প্রস্থাবনা তুলে ধরেন। তার প্রস্তাবগুলো হলো :

১. গণরুমে পর্যাপ্ত বাংক বেডের ব্যবস্থা করতে হবে। দোতলা এই বেডগুলো স্থাপনের মাধ্যমে চারটি বেডে শিক্ষার্থী অপেক্ষাকৃত সুন্দরভাবে অবস্থান করতে পারবে। এবং সেখানে তাঁদের পড়াশোনা করার পরিবেশ বজায় থাকবে।

২. এছাড়া গণরুমে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এনে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আসতে হবে। প্রতিটি গণরুমে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি শিক্ষার্থী রাখা যাবে না।

৩. বাড়তি শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য বাংক বেডের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

৪. বিশ্ববিদ্যালয়ে হলসংখ্যা এখনো পর্যন্ত যথেষ্ট নয়। শিক্ষক-কর্মচারী জন্য বহুতল আবাসনের প্রকল্প আমরা সাধুবাদ জানাই কেননা তাঁদের অধিকার আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, তাদের আবাসনের দিকেও সমান দৃষ্টি দিয়ে নতুন হল নির্মাণ করতে হবে।

৫. যেহেতু শিক্ষার্থী অনুযায়ী হলসংখ্যা বাড়ছে না তাই বিশ্ববিদ্যলয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তির আসন সংখ্যা কমিয়ে পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করে উন্নত শিক্ষা প্রদান করতে হবে।

৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে বহিরাগত মুক্ত করতে হবে।

এর আগে আবাসিক হলের বৈধ সিট ছেড়ে গণরুমে থাকার ঘোষণা দেন এই নেতা। সে সময়  দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,  গণরুমে থাকা শুরু করেছি। কবি জসীমউদ্দীন হলের ২০৮ নং রুমে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। প্রশাসন যতদিন পর্যন্ত গণরুম নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেবে, ততদিন থাকব। এটা আমার প্রতিবাদের ভাষা। 

তানবীরের বক্তব্য, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মধ্যে গণরুম একটি বড় সমস্যা। ডাকসুর নির্বাচনে সবগুলো প্যানেলেরই ইশতেহারের বড় জায়গা জুড়ে গণরুম সমস্যা সমাধান নিয়ে কথা ছিল। আমি নিজেও গণরুম সমস্যা সমাধানের কথা বলে ভোট চেয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এতদিনে গণরুম সমস্যার কোন সমাধানে পথ তৈরি করতে পারিনি। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সমস্যার কোন সমাধানের চেষ্টাও করেনি।’

‘আমি বিশ্বাস করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীই মেধাবী, তাদের সুযোগ দিলে তারা তাদের মেধা ও মননের পরিচয় ঘটাতে সক্ষম হবে। গণরুমে কেন নষ্ট হবে আমাদের সোনার ছেলেদের মেধা? আর আমি মনেকরি গণরুমই তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’

‘যেহেতু ছাত্রদের একজন প্রতিনিধি হয়েও এতো দিনে এই সমস্যার কোন সমাধান তৈরি করতে পারিনি তাই আমি লজ্জিত এবং ক্ষমা প্রার্থী। একইসাথে আমি আজ থেকে গণরুমে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর আমার নিজের লিগ্যাল সিটে প্রতিদিন একজন করে গণরুম থেকে ছাত্র ঘুমাবে যদিও আমি ইতিমধ্যে একজন ছাত্রকে আমার সাথে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, আমি একা একসিটে ঘুমাইনি। যতদিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গণরুম সমস্যার দৃশ্যমান কোন সমাধান করছে। এবং একইসাথে গণরুমে থাকাটা আমার প্রতিবাদের একটি ভাষা। প্রয়োজনে একাই লড়াই করে যাবো।’


সর্বশেষ সংবাদ