ঢাবির এসএম হল

একজন ধর ধর বলে, আরেকজন পেটে লাথি মারে: উম্মে হাবিবা বেনজির

হাসপাতালে বেনজীর
হাসপাতালে বেনজীর  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের ছাত্র ফরিদ হাসানকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনায় হল প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে হামলা ও অবরুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ছাত্রীদের ডিম মারারও অভিযোগ উঠেছে ওই হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান হোসেন রাসেল ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপসের নেতৃত্বে তাদের অবরুদ্ধ করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে মারধরের ঘটনার অভিযোগপত্র স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের প্রভোস্টকে দিতে গিয়েছিলেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন, শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, অরণি সেমন্তি খানসহ কয়েকজন। তবে নুরসহ ছাত্রনেতারা হলটির ভেতরে গেলে সেখানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয় ও অবরুদ্ধ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর হলটির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের অন্য নেতাদের আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার ও লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন ইমি ও বেনজির। তাদের গায়ে ডিমও ছুড়ে মারা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এস এম হল ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস ।

হামলার বিষয়ে ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, আমরা সন্ধ্যায় ফরিদকে মারধরের ঘটনার লিখিত অভিযোগ প্রভোস্টকে জানাতে এসএম হলে যাই। আমরা হলের নিচে অপেক্ষা করছিলাম, নুর ফরিদকে নিয়ে তার রুমে যায় রক্তমাখা ড্রেস পাল্টানোর জন্য। সে সময় হল ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদেরকে বিভিন্ন অশালীন কথা বলে এবং এক সময় তারা আমাদেরকে ডিম ছুঁড়ে মারে। এরপর আমরা এস এম হলের মূল গেটে অবস্থান করি। নুর ভেতরে অবরুদ্ধ ছিল। ভেতর থেকে নুরসহ অন্যরা যখন বের হয়, তখন আমরা দেখি ছাত্রলীগের হল শাখার নেতৃবৃন্দ আমাদের পেছনে পেছনে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা এলোপাথাড়ি লাথি, কিল ঘুষি শুরু করে। আমাকে উদ্দেশ করে একজন বলে, ‘এরে ধর ধর’! আরেকজন আমার পেটে লাথি মারে।

শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি বলেন, উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফরিদ ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী ছিল, তাকে বিভিন্নভাবে ছাত্রলীগ চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন করতে দেয়নি। পরবর্তীতে অছাত্রদের বের করে দেওয়ার যে অভিযান ছিল সেখানে তার ভূমিকা ছিল। এজন্য  গতকাল হলে ছাত্রলীগের নেতারা ফরিদের ওপর হামলা চালিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে আমরা এসএম হলে যাই। ছেলেদের হল হওয়ায় আমরা  গেটের বাইরে অবস্থান করছিলাম। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের উদ্দেশ করে আপত্তিকর উক্তি করে। তাদের কয়েকজনকে আমি চিনতে পেরেছি। প্রভোস্টের সহায়তায় নুররা বের হয়ে আসার পর ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের গায়ে ডিম ছুড়ে মারে।

পরে নুরের সঙ্গে করা সংবাদ সম্মেলনে ইমি আরও দাবি করেন, ‘এসএম হলের সামনে বারবার পেছন থেকে আমাকে টানা হচ্ছিল। কেন টানা হচ্ছিল এটা তদন্তের দাবি রাখে।’ 

তিনি আরও বলেন, আমি যখন এসএম হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপসকে জিজ্ঞেস করি যে আমার গায়ে ডিম কেন মারা হয়েছিল?  সে উল্টো আমাকে ধমকিয়েছে। তখন তার সঙ্গে হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শিমন ছিল। সেও আমার সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করেছে। সে এক পর্যায়ে সে আমার হাত ধরে অশালীন মন্তব্য করে।  এভাবে তারা আমাদের ‘হ্যারেসমেন্ট’ করেছে। ছাত্রলীগের এইসব নেতা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা কোনও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আচরণ হতে পারে না। সে এর আগেও নির্যাতনের অভিযোগে বহিষ্কৃত হয়েছে। আমার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে এর সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এখান (ভিসির বাসভবন) থেকে সরবো না।

প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ শিক্ষার্থীরা নুর ও তার সঙ্গীদের ওপর ছাত্রলীগের কর্মীরা ডিম ছুড়েছে বলে দাবি করলেও এসএম হলের ভিপি কামাল বলেছেন,‘এসব মিথ্যা অভিযোগ। মাদক ব্যবসায়ীকে বাঁচানোর জন্য তিনি (নুর) হলে এলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ডিম নিক্ষেপ করেছে।’

প্রভোস্টের সামনে এধরনের ঘটনা হলেও তিনি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পুনরায় আবার ফোন দেওয়া হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে ইমির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসএম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস বলেন, তার সঙ্গে এ ধরনের কোনও কথা হয়নি। ইমিকে হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করেছিল যে ডাকসুর জিএস এবং এজিএস থাকতে আপনি এখানে কেন এসেছেন? তার সঙ্গে এ ধরনের কোনও কথাই হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের প্রো-ভিসি মহোদয় হলে গিয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। যার যা অভিযোগ, কী ঘটেছিল সেগুলো জানানোর জন্য আমরা সেখানে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রভোস্ট হলে আছেন এই মুহূর্তে, দুই পক্ষেরই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আছে। সেগুলো লিখিতভাবে নেওয়া হবে। আমরা এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence