ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত ভর্তি পরীক্ষা আগামী বছর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো

ভর্তি পরীক্ষায় আগামী বছর থেকে এমসিকিউ’র পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেনীতে ভর্তি বিষয়ক সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে  সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আগামী বছর থেকে এমসিকিউ’র পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সেটি কীভাবে নেয়া হবে, কত মার্কের হবে— সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ভর্তি পরীক্ষার বর্তমান পদ্ধতিতে কিছু সংস্কার আনতে হবে। ডিনস্ কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার একটি সুপারিশ এসেছে। হঠাৎ করেই কোন সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আমরা ভবিষ্যতে কিছু পরিবর্তন আনব। সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগে থেকেই জানিয়ে দেয়া হবে।

লিখিত পদ্ধতির পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তিকে ইতিবাচক বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষা নেয়া ভালো। এর মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাই সম্ভব হয়। শিক্ষার্থী লেখার মাধ্যমে তার অনুধাবন শক্তি প্রকাশ করতে পারে।

প্রতিবছরই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে ভর্তিযুদ্ধে নামতে হয় একাদশ পাস করা শিক্ষার্থীদের। তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মেধাবীদের সুযোগ মিলে একটি আসনের। এক সময় লিখিত পরীক্ষা নেয়া হলেও গেল কয়েক বছর ধরে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই বহু নির্বাচনী পদ্ধতি (এমসিকিউ) অনুসরণ করে আসছে। তবে এ বছর হঠাৎ করেই এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিল করে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। 

এদিকে চলতি বছরই এমসিকিউ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)। 

১৫ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জবি জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪তম একাডেমিক কাউন্সিল সভায় ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিল করে লিখিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, নৈব্যক্তিক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে শিক্ষার্থীরা বাজারের বিভিন্ন গাইড ও কোচিং সেন্টারের সুবিধা নিয়ে থাকে। এতে করে প্রকৃত মেধা যাছাই করা সম্ভব হয় না। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে শুধুমাত্র মেধাবীরাই ভর্তি পরীক্ষায় জায়গা করে নিতে পারবে। কেননা লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে মূল বই পড়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

আর পাবিপ্রবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি বিভাগে স্নাতক (ইঞ্জিনিয়ারিং), স্নাতক (সম্মান) বিবিএ, পাঁচ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ও বি ফার্ম (প্রফেশনাল) কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৬ নভেম্বর (শুক্রবার) লিখিত পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে।

এ বছর সর্বপ্রথম এমসিকিউ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত উপকমিটির সভায় স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি (বহুনির্বাচনী) বাতিল করা হয় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে আগামী বছর থেকে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাবি কর্তৃপক্ষ।

এ বছর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিল করার ঘোষনা দিয়ে পরে সিদ্ধান্ত বদলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তারাও আগামী বছর থেকে লিখিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘এমসিকিউতে প্রকৃত মেধাবী মুল্যায়ন করা যায় না। আমাদের লক্ষ্য অপেক্ষাকৃত বেশি মেধাবী শিক্ষার্থী। তাই এ সিদ্ধান্ত। আগে এমসিকিউ ছিলো। তখন মেশিনে খাতা কাটা হতো। এখন যেহেতু লিখিত তাই মেশিনে খাতা কাটার অপশন থাকছে না। সেক্ষেত্রে ফল প্রকাশে কিছুটা বেশি সময় লাগবে।’ ভর্তি জালিয়াতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভর্তি জালিয়াতি ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর। কেউ যেন ভর্তি বাণিজ্য করতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ