পুলিশের সামনে অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা, ফেসবুকে প্রতিবাদ-সমালোচনা

পুলিশের সামনে অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা
পুলিশের সামনে অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা  © ফাইল ছবি

নড়াইলে এক কলেজ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় প্রতিবাদের পাশাপাশি সমালোচনাও চলছে সোশাল মিডিয়ায়। পুলিশের সামনে কী করে একজন অধ্যক্ষকে এভাবে অসম্মান করা গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। প্রতিবাদকারীরা বলছেন, শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে ওই অধ্যক্ষকে এভাবে অপমানিত হতে হয়েছে।

ভার্চুয়াল জগত ছেড়ে সেই প্রতিবাদ এবার নামছে মাঠেও। আগামী সোমবার বিকালে ঢাকার শাহবাগে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকা হয়েছে।

ইসলাম ধর্ম নিয়ে ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে নড়াইলের কলেজের এক ছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত ।

জানা যায়, গত ১৭ জুন নড়াইলের সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ওই ছাত্র ওই পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু মুসলমান ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন।

ওই সময় ‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা তৈরি হয়।অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ বাঁধে।

ওই সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছিল। ওই ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে আসে, যাতে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়।

নাট্যকর্মী জুলফিকার চঞ্চল ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, “ছবিতে নড়াইল মির্জাপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে দিচ্ছে তারই ছাত্র, তাও আবার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে। অভিযোগ কী? উনি ধর্ম অবমাননা করেছেন। কীভাবে? একদল ছাত্র তাঁকে গিয়ে উত্তেজিতভাবে জানান, তার কলেজের একজন হিন্দু ছাত্র ভারতের নূপুর শর্মার পক্ষে পোস্ট দিয়ে ধর্ম অবমাননা করেছে। স্বপন কুমার বিশ্বাস সঙ্গে সঙ্গে থানায় ফোন করেন। কেন তিনি ফোন করলেন? ফোন করাই অপরাধ। এই ফোন করাটাই ধর্ম অবমাননা। সাথে সাথে এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হলো শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস ছাত্র .. এর পক্ষ নিয়েছে।  তারপর তাদের উপর হামলাও চালানো হয়, মারধর করা হয়। কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, এলাকাবাসীর সামনে পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা গলায় পরিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।”

কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতা ফেসবুকে তুলে ধরে আসমা উল হুসনা নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছেন বেশ করছেন। কিন্তু মানুষের মগজের একটু উন্নয়নও কি প্রয়োজন নেই? এত উগ্র ধর্মান্ধ তো আমার দেশ ছিল না, এখন কেন হয়ে গেলো? কেন আইন-আদালত থাকতেও পাবলিক বিচার করে আর পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখে? এভাবে কি একটা সভ্য দেশ চলতে পারে?”

সেই ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। জানা গেছে, ওই শিক্ষক আতঙ্কে বাড়িতে থাকছেন না।

কলেজ অধ্যক্ষকে কেন আটক করা হয়েছিল-জানতে চাইলে নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ কোনো ধর্ম অবমাননা করেননি। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথাও ঠিক নয়। সেদিন তাকে সেইফ করা হয়েছিল। যেহেতু তিনি অপরাধ করেননি, তার বিরুদ্ধে মামলা করারও বিষয় নেই।

জুতার মালা পরানো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, যারা এটা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুতার মালা পরানোর কোনো ঘটনা আমি দেখিনি। সেরকম কিছু আমার জানা নেই।

ওই শিক্ষকের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওসি বলেন, উনি আমাদের এরকম কিছু বলেননি, বললে নিশ্চয়ই নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, সে এখন হাজতে আছে। (মামলার) তদন্ত চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence