চাকরির প্রলোভন, যেভাবে ভার্চুয়ালি ফাঁদ পাতে ফল বিক্রেতা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:৩৭ PM , আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:৩৭ PM
গুগল-উইকিপিডিয়ায় টাইপিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া দেশে-বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি সুযোগ রয়েছে। এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরির আশ্বাসে শতাধিক নারীকে ভার্চুয়াল মেডিকেল পরীক্ষার নামে ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র।
এমন অভিযোগে আল ফাহাদ নামে এক ফল বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছে এলিট ফোর্স র্যাব। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর গুলশানের নৰ্দ্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি ক্যামেরা, দুটি ক্যামেরার লেন্স ও একটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিমকার্ড, একটি এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ও ৪০৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
করোনা মহামারির কারণে হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল পরীক্ষা করা সহজ ছিল না। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও করে ভিকটিমদের ব্ল্যাকমেইল করত ফাহাদ।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এসময় তিনি বলেন, সম্প্রতি অপরাধীরা ভার্চুয়াল জগতের অপব্যবহার করে বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করছে। প্রতারকরা বিভিন্নভাবে নারীদের হেনস্তা, প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলছে। ভুক্তভোগী অনেকে ‘রিপোর্ট টু র্যাব’ ও র্যাবের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানায়। এছাড়া অনেকে র্যাবের কাছে সরাসরি অভিযোগ দেন। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের ধরতে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নৰ্দ্দা এলাকায় অভিযান চালায়। পরবর্তীতে ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল স্ক্যানিং’-এর নামে গোপন ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অপরাধে আল ফাহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাহাদ জানিয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে।
যেভাবে চলছিল ব্লাকমেইলিং: প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চ বেতনের চাকরি প্রলোভন দেখাত চক্রটি। এসময় চাকরিপ্রত্যাশী অনেক নারীই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তাদের (চাকরিপ্রার্থী) প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে তিনশ থেকে ৫০০ টাকা ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ নেওয়া হতো। এভাবে অনেক চাকরিপ্রত্যাশীকে আকৃষ্ট করতেন।
অন্যদিকে মোবাইলে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে নারীকণ্ঠে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। এছাড়া বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীদের করোনাকালীন সময়ে ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল’ করা হবে বলে জানানো হতো। প্রার্থীদের (নারীদের) বিভিন্ন সামাজিক চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত করত। এসময় নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিও কলে মেডিকেল পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমদের গোপন ভিডিও ধারণ করত। পরবর্তীতে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হতো। এভাবে অভিযুক্ত ফাহাদ শতাধিক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন।
নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরি প্রত্যাশীদের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হতো। ফাহাদ নিজেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে ‘ভুয়া নিয়োগ’ প্রক্রিয়া শেষ করতেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীর নাম ব্যবহার করে চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রথমে নিজেকে দেশি বা বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেছেন বলে দাবি করতেন। পরবর্তীতে নিজেই ওই কোম্পানির এডমিন অফিসার হিসেবে বিভিন্ন পরিচয় দিতেন এবং ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিতেন। পুনরায় ওই অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে নিজেই মেডিকেল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চুয়াল মেডিকেল করানোর নামে ভিডিও করতেন।
যেহেতু করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল পরীক্ষা করা সহজ ছিল না, সেক্ষেত্রে গ্রেপ্তার ফাহাদ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও করে ভিকটিমদের ব্ল্যাকমেইল করতেন।
দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা: শতাধিক নারীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করেছেন ফাহাদ। যারা তার ফাঁদে পা দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচহাজার টাকা নেওয়া হতো। এভাবে দেড় বছর ধরে শতাধিক নারীকে গোপন ভিডিও দেখিয়ে প্রতিনিয়ত ব্ল্যাকমেইলিং করতেন।
কে এই ফাহাদ: ফাহাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে লেখাপড়া ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে বাবার সঙ্গে রেলস্টেশনের পাশে একটি ছোট ফলের দোকানে বসতেন। ফল বিক্রির আড়ালে ফেসবুকে ‘Online Job BD’ ও ‘Part Time Jobs in Dhaka’ এবং ‘Part Time Jobs in Bangladesh’ নামে গ্রুপে সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে গ্রুপে দেশি/বিদেশি কোম্পানিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চাকরি দেওয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে ফেসবুকে বেশ কিছু ভুয়া আইডি ব্যবহার করতেন তিনি।