রিজেন্টে এসএসসি পাস চিকিৎসকের হাতে ‘খুন’ হয় কিশোরী জান্নাতুল
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ১০:১৩ AM , আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০, ১০:১৩ AM
২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যায় জান্নাতুল ফেরদৌস (১৬) নামে এক কিশোরী। কিন্তু সেখানকার এক ভুয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মারা যায় সে। পুলিশের তদন্ত অনুযায়ী, এসএসসি পাস ব্যক্তিকে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে তার মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়ে দৃশ্যত খুন করা হয়েছে তাকে।
তদন্তের পর খুনের অভিযোগে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওই ভুয়া চিকিৎসকসহ চারজনের নামে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অথচ সাহেদকে আসামি করা হয়নি। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন তিনি।
মামলায় ভুয়া চিকিৎসক ফারুক হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, ‘১৯৯৫ সালে আমি এসএসসি পাস করি। এরপর ১৯৯১ সালে পল্লি চিকিৎসকের কোর্স করি। ১৯৯৫ সালে ঢাকায় চলে আসি। ওষুধের ব্যবসা করতে করতে ডাক্তারদের সঙ্গেও পরিচয় হয়, কাজের অভিজ্ঞতা হয়। গত বছর (২০১৬) আমি রিজেন্ট হাসপাতালে গিয়েছিলাম চাকরির জন্য। সেখানে এমডি ও মার্কেটিং এর খলিলুর রহমানের সঙ্গে দেখা করি। আমি বলি, আমি আইসিইউ ও ওটির কাজ জানি।’
তিনি বলেন, ‘পরে সাহেদ সাহেব আমাকে ডাকেন। তিনি আমাকে অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ দেন। ঘটনার দিন দুপুরে ৩টার দিকে হাসপাতালে যাই। সেখানে অপারেশন থিয়েটারে জান্নাতুল ফেরদৌস শুয়ে ছিল। হাসপাতালের ডাক্তার নাসির উদ্দিন রোগীকে অ্যানেসথেসিয়া ইনজেকশন দিতে বলে। আমি ইনজেকশন দিলে পরে রোগীর শরীরে অক্সিজেন কমে গেছে। কিছুক্ষণ পর জান্নাতুল মারা যায়।’
জানা যায়, জান্নাতুল ফেরদৌসের ৯ বছর বয়সে পড়ে গিয়ে বাঁ হাত ভেঙে ফেলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বাঁ হাত বাঁকা হয়ে যেতে থাকে। তার বাবা জয়নাল শেখ বলেন, ‘৭ বছর পর মেয়ের বাঁ হাতে সমস্যা হওয়ায় রিজেন্ট হাসপাতালের সাইফুল নামের কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলি। সাইফুল আমাকে বলেছিল, হাসপাতালে ভালো ডাক্তার আছে। পরে মেয়েকে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে ভুয়া ডাক্তার ফারুক মেয়েকে দুটো ইনজেকশন দিলে আমার মেয়ে মারা যায়। সে জন্য পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করি।’
পল্লবী থানা-পুলিশ ভুয়া চিকিৎসক ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে ফারুক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে উঠে আসেসাহেদের নাম। তবে সাহেদকে পুলিশ আটক করেনি। পরে তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা-পুলিশ (ডিবি)। ডিবির তদন্তেও উঠে আসে, জান্নাতুল খুন হন। তবে ডিবি পুলিশ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজবাউল আলম ও চিকিৎসক নাসির উদ্দিন সিকদারকে মামলা থেকে বাদ দেন। ভুয়া চিকিৎসক ফারুক ও সাইফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
ডিবির অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেন জয়নাল শেখ। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সঠিকভাবে তদন্ত করেনি। মেজবাউল ও চিকিৎসক নাসির উদ্দিন নানাভাবে আপস করার জন্য চাপ দেয়। আপস না করায় বাদীকে হত্যার হুমকিও দেয়। আমার মেয়েকে ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছে। রিজেন্ট হাসপাতাল হত্যার দায় এড়াতে পারে না।’
আবেদন গ্রহণ করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআইয়ের তদন্তেও উঠে আসে, জান্নাতুলকে খুন করা হয়েছে। এই খুনের সঙ্গে জড়িত আছেন ভুয়া চিকিৎসক ফারুক হোসেন, চিকিৎসক নাসির উদ্দিন, এমডি মেজবাউল আলম এবং সহকারী সাইফুল।
পিবিআইয়ের অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গত বছরের ২৪ জুলাই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন। মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। জয়নাল শেখ বলেন, ‘জান্নাতুল আমার বড় মেয়ে। তাকে চিকিৎসার নামে রিজেন্ট হাসপাতাল হত্যা করেছে। বহুবার চেষ্টা করেছি, মালিক সাহেদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। কিন্তু দেখা করেনি, উল্টো আমার পরিবারকে হুমকি দিয়েছে। আমি সাহেদের বিচার চাই।’
ভুয়া চিকিৎসক ফারুক হোসেনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা জবানবন্দিতে উল্লেখ থাকলেও কেন সাহেদকে আসামি করা হয়নি? এ প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. কবির হোসেন বলেন, ‘জান্নাতুল খুনের মামলায় সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ভুয়া চিকিৎসক ফারুকের নিয়োগপত্র পেলে সাহেদকে খুনের মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করতাম।’