রাজনীতিবিদরা তাদের প্রয়োজনে নয়ন বন্ডদের জন্ম দেয়

নয়ন বন্ডরা একদিনে জন্ম নেয় না ,রাজনীতিবিদরা তাদের প্রয়োজনে নয়ন বন্ডদের লালন পালন করে বড় করে। আর তাদের প্রয়োজনে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেয়।নয়ন বন্ডের আসল নাম সাব্বির হোসেন নয়ন। এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিণত হওয়ার পর তার নাম হয়ে গেলো ‘নয়ন বন্ড’।

আমরা সিনেমাতে যেমন দেখি ভিলেন হতে গেলে একটু মারদাঙ্গা নাম হতে হয়। ভিলেন হওয়ার কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন; মারামারি, কোপাকুপি জানতে হয়। নয়ন বন্ডের মধ্যে ঠিক সেই খারাপ গুণগুলো ফুটে উঠেছিলো। শুরুতে নয়ন বন্ড ছিলো সাব্বির হোসেন। এরপর তার মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করতে পারার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে তাকে নয়ন বন্ড হতে সহায়তা করেছে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা।

স্থানীয় এমপি সম্ভু দেবনাথের ছেলে সুনাম দেবনাথের মাদক ব্যবসার অন্যতম সহযোগী ছিলো " নয়ন বন্ড"। তার নামে একাধিক মামলা থাকলেও, বারবার আটক হওয়ার পর আবার জামিন পেয়ে বের হয়ে এসেছে। কাদের নির্দেশে বারবার নয়ন বন্ডকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে?

নয়ন বন্ড যদি জেলের মধ্যে আটক থাকতো তাহলে কি আজকে রিফাতকে খুন হতে হতো?আজকে যারা নয়ন বন্ডকে জেল থেকে বের হতে বারবার সহযোগিতা করেছে, তারাও রিফাত হত্যার সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। যারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিলো, তাদেরকে কি আইনের আওতায় আনা হবেনা?

আজকে নয়ন বন্ডকে আটক করলে অনেক কিছু জানা যেতো। তাকে "সাব্বির হোসেন নয়ন" থেকে "নয়ন বন্ড" হতে কে কে সহযোগিতা করেছে তাদের নাম পরিচয় জানা যেত। কিন্তু সে সুযোগ আর রাখা হলো না।

আমরা কি হারকিউলিসের কথা ভুলে গেছি। হারকিউলিস কি পেরেছে ধর্ষণ বন্ধ করতে? পারেনি। আমাদের আছে বিচার বিভাগ। এভাবে আইনের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের বিচার না করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের মূলে রয়েছে রাঘববোয়ালদের রক্ষা করা।সাধারণ জনগণকে এভাবে ধোকা দেওয়া হয়। আর আমরাও মোহে পড়ে বাহবা দিতে থাকি।

একদম ফ্রেশ সংবাদ। নরসিংদীতে একজন আইসক্রিম ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।আমরা কি ভুলে গেছি টেকনাফের কাউন্সিলর মোঃ একরামুল হককে তথাকথিত এক ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার কথা? আমরা কি ভুলে গেছি ‘আব্বু তুমি কান্না করতেছো যে?’

শুধু অপরাধীকেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়না, নিরীহ অনেক মানুষকে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে বলে অনেক অভিযোগ আছে। আজকে যদি আমি এই হত্যাকান্ডকে সমর্থন করি, তাহলে আমার কপালে যে মিথ্যা, সাজানো নাটক করে এই তথাকথিত ক্রসফায়ার জুটবেনা তার নিশ্চয়তা কি?

আমাদের বিচার বিভাগ আছে, কিন্তু বিচারের বাণী ফাইলে আটকিয়ে থাকে৷ যেকারণে নয়ন বন্ডের মত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ার দিলে সাধারণ জনগণ খুশি হয়।আবার বিশ্বজিতের হত্যাকারীদের মৃত্যুদন্ড থেকে মুক্তি দিলে, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের রাষ্টপতির ক্ষমার মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিলে অথবা তনু, সাগর-রুনী হত্যার বিচার না হলে তারা অসন্তুষ্টি হয়।

নয়ন বন্ডের মত শীর্ষ সন্ত্রাসীনকয়েকজনকে ক্রসফায়ার দিলেই অপরাধ কমবে না। কারণ বিশ্বজিতের খুনীদের বিচার হয়নি। একজন দু'জন ধর্ষককে হারকিউলিস হত্যা করলেই ধর্ষণ কমবে না। কারণ প্রতিদিন ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সকল অপরাধকে সমূলে দমন করতে দরকার আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের কার্যকারিতা।

যদি পারেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন। নুসরাত, তনু, সাগর রুনী, বিশ্বজিতের খুনীদের ফাঁসি নিশ্চিত করুন। এতেই সাধারণ জনগণ খুশি হবে। নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ার না দিয়ে ফাঁসি দিলে সাধারণ জনগণ কি খুঁশি হতো না? বরং নয়ন বন্ডকে আটক করলে, নয়ন বন্ডের আশ্রয়দাতাদেরও বিচার করার সুযোগ থাকতো।

বিনাবিচারে নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ার দেওয়া মানেই রাঘববোয়ালদের রক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আশা করি, সাধারণ জনগণ এই সত্যতিটা বুঝতে ভুল করবেনা।

পরিশেষে বলতে চাই, আজকে নয়ন মারা গেছে! নয়ন একটি সাধারণ চরিত্রের নাম। আরেক নয়ন জন্ম নিতে কতক্ষণ? আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে এমন অনেক নয়ন বন্ডের জন্ম হবে।

 

লেখক: যুগ্ন আহবায়ক, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।


সর্বশেষ সংবাদ