জবি ছাত্রদল নেতা খুন
সন্ধ্যায় রক্তাক্ত হাতে বাসায় ফেরেন মাহির রহমান
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৯ PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য জোবায়েদ হোসেন গত রবিবার টিউশনিতে যেয়ে খুন হন। জোবায়েদকে খুন করার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রক্তাক্ত হাত নিয়ে বাসায় নিয়ে বাসায় ফেরেন সন্দেহভাজন হত্যাকারী মাহির রহমান। তিনি জোবায়েদের ছাত্রী বর্ষার দীর্ঘদিনের বয়ফ্রেন্ড ছিলে। দেশজুড়ে আলোচিত এ হত্যাকান্ডে জোবায়েদের ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা ছাড়াও আরো তিনজন অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ। এই তিনজনই যুবক।
আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র। এদিন সন্ধ্যায় আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন মাহিরের মা রেখা রহমানের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। রেখা জানান, রবিবার সন্ধ্যার দিকে রক্তাক্ত ও ক্ষত হাত নিয়ে বাসায় ফেরেন মাহির। বাসায় ফিরে মাকে খুলে বলেন ঘটনা। এরপর মাহিরকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাবস্থা করেন তিনি। মাহিরকে চিকিৎসার জন্য কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় নিয়ে যান মা রেখা রহমান। হাসপাতালে তিন ঘন্টার অধিক সময় লাগে তার চিকিৎসা করতে। পরে সকালে চকবাজার থানায় মাহিরকে নিয়ে যান তার মা।
মাহিরের মা রেখা রহমান বলেন, আমার ছেলের সাথে ওই মেয়ের নয় বছরের সম্পর্ক ছিল। তারা একইসাথে বড় হয়েছে। পরে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্ত কিছুদিন আগে ওই মেয়ে আমার ছেলেকে জানায় যে সে আমার ছেলের সাথে আর সম্পর্ক রাখবে না। ওই ছেলের সাথে(জোবায়েদ) আমার ছেলেকে দেখাও করিয়ে দেয় বর্ষা।
রেখা রহমান বলেন, “সেদিন সন্ধ্যায় ওই ছেলে (জোবায়েদ) টিউশনিতে যাওয়ার পথে মাহিরের সঙ্গে দেখা হয়। সে মাহিকে ডেকে তার মোবাইল থেকে বর্ষার ছবি মুছে ফেলতে বলে।” রেখা রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, মাহিরের বন্ধু ‘ইলান’ নামের আরেকজন ছেলে ঘটনাস্থলে ছিল। “মাহির ও ওই ছেলে (জোবায়েদ) ঘরের ভেতরে কথা বলছিল, আর ইলান ঘরের বাইরে অপেক্ষা করছিল। একপর্যায়ে মাহির ও ওই ছেলের মধ্যে ঝগড়া বাধে, এবং তাতে জোবায়েদ দুর্ঘটনাবশত নিহত হয়।” তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলে অপরাধ করেছে, তাই আমি তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। ওই ছেলেটিও (জোবায়েদ) তো আরেক মায়ের সন্তান।”
জানা গেছে, রবিবার জুবায়েদ হোসাইন পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় টিউশনিতে গিয়ে খুন হয়।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯- ২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই সাথে তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণের সভাপতি ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন।
গত এক বছর ধরে জুবায়েদ হোসাইন পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় ১৫, নুরবক্স লেনে রৌশান ভিলা নামের বাসায় বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রী ও বায়োলজি পড়াতেন। ওই ছাত্রী বর্ষার বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন। রবিবার (১৯ অক্টোবর) আনুমানিক বিকাল ৪ টা ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তিন তলায় উঠতে সিড়িতে তিনি খুন হন। বাসার নিচ তলার সিঁড়ি থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রক্ত পড়েছিল। তিন তলার সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীতে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখে। রবিবার রাত ১১ টার দিকে ওই ছাত্রী বর্ষাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয়। এদিন রাত ১১ টার সময় আরমানিটোলার নূরবক্স রোড়ের নিজ বাসা থেকে তাকে পুলিশ প্রটোকলে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। এর আগে রাত ১০ টা ৫০-এর সময় খুনের শিকার জুবাইদ হোসাইনের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে নেয় পুলিশ। আজ সোমবার তার ময়নাতদন্ত শেষ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
২৪ ঘন্টা পেরোলেও হয়নি কোনো মামলা। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য জুবায়েদ হোসাইন খুনের ঘটনায় ওই ছাত্রী বর্ষাসহ মোট চার জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি। তিনি বলেন, বিশেষ অভিযানে আমরা এখন পর্যন্ত ওই মেয়ে ছাড়া আরও তিনজন আসামিকে আটক করেছি। তবে এখনই তাদের নাম পরিচয় আমরা প্রকাশ করবো না তদন্তের স্বার্থে। আগামীকাল সকালে আমরা বিস্তারিত বিফ্রিং করব। এ ছাড়া আপাতত আর কিছুই বলা যাবে না। নতুন আটক তিনজনই যুবক।