উপজেলা হাসপাতাল রেখে সামনের ফার্মাসিতে চিকিৎসা, ভুল এন্টিবায়োটিকে হাত-পা হারালেন ৮ বছরের শিশু
- ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৪ AM , আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫, ০৯:১২ AM
৮ বছর বয়সী ফুটফুটে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র তানভীর। জ্বর নিয়ে এসে ভুল চিকিৎসার শিকার সে। যার কারণে হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভোলার বোরহানউদ্দিনের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) শফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি।
এ ঘটনায় ওই শিশুর মা মিতু বেগম স্যাকমোর বিরুদ্ধে ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে শনিবার (১৯ জুলাই) সংশ্লিষ্ট স্যাকমোকে গ্রেফতার করেন স্থানীয় থানা পুলিশ। তানভীর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ফুলকাচিয়া ৬নং ওয়ার্ডের মোসলেম এর সন্তান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোরহানউদ্দিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান।
তানভীরের বাবা মো. মোছলেম, মা মিতু ও এজহার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাতে তানভীর জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের সামনে অবস্থিত আকিব মেডিকেল হলের মালিক দালাল আকিবের সাথে দেখা হয়। ভালো ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তার ফার্মেসিতে নিয়ে যান। আকিব, স্যাকমো শফিকুলকে দেখান। সফিক টেস্ট লিখে দেন। টেস্টের জন্য আকিব তাদেরকে নিয়ে যান আহসানিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
টেস্ট শেষে রিপোর্ট দেখে শফিকুল ইসলাম জানায়, ছেলের ডেঙ্গু হয়েছে। শফিক তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে বলেন। এরপর আকিব ৪টি ইনজেকশন পুশ করেন। সাথে সাথে তানভীরের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বিষয়টি শফিকুল ইসলামকে জানায় তারা। তিনি অ্যালার্জির সমস্যার কথা বলেন। ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতাল এরপর বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ এবং পরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
মিতু বেগম ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের উদ্ধৃতি দিলে বলেন, বোরহানউদ্দিনে ভুল চিকিৎসার কারণে তার সন্তানের এ অবস্থা। চলতি মাসের (১৫ জুলাই) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তানভীরের দুটি হাতের কবজি ও একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে। শিশুটি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম বোরহানউদ্দিনের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে স্যাকমো হিসেবে কর্মরত। এছাড়া হাসপাতাল সড়কে আকিব মেডিকেল হল ও দেউলা মেডিকেল হল নামে দুটি ঔষধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ব্যক্তিগত চেম্বার করেন।
স্যাকমো শফিকুল ইসলাম বলেন, তিন মাস আগে তানভীর নামে রোগীকে নিয়ে তার স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরা করছিল। কেউ তাকে চিকিৎসা দেয়নি। পরে তাকে আমি দেখেছি। তার সারা গায়ে অ্যালার্জি, ক্রাশ, ফোড়ার মতো এবং প্রচণ্ড জ্বর ও খিঁচুনি ছিল। আমি তাকে জ্বরের সিরাপ, জ্বরের সাপোজিটর ও খিঁচুনি কমার জন্য সেডিল ইঞ্জেকশন হাপ এম্পুল দিয়েছি। যাতে তাঁর খিঁচুনি না হয়। আমি তাকে শুধু জ্বরের ট্রিটমেন্ট দিয়েছি। আপনার ব্যবস্থাপত্রে ডেঙ্গু লিখছেন এবং অ্যান্টিবায়োটিক লিখছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি নীরব থাকেন, এ সময় কোন উত্তর দিতে পারেন নি। তানভীরের বাবার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি কোনো ভুল চিকিৎসা দেননি।
বোরহানউদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কে. এম. রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে কর্মরত স্যাকমো শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তানভীরের বাবা একটি অভিযোগ করেছেন। তারা বাচ্চাটিকে একটি সেফট্রিয়াক্সোন অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে। যতটুকু কাগজপত্র দেখেছি তাতে সন্দেহ করা যায় হয়তোবা সেফট্রিয়াক্সোন দেওয়ার ফলে ড্রাগ রিএ্যাকশন হয়েছে। আমি যতটুকু জানি বাচ্চাটা মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। সুস্থতা কামনা করছি।
বোরহানউদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, স্যাকমো সফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।