কুমিল্লায় ভর্তি পরীক্ষার সময় কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্রসহ মহড়া, আটক ৩
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৯ PM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ০১:০০ PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৪-২৫ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইন্টারমিডিয়েট শাখার সামনে কিশোর গ্যাংয়ের প্রকাশ্য শোডাউনের ঘটনায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিকেল ৪টার দিকে প্রায় ১৬-১৭ বছর বয়সী কিশোরেরা হাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কলেজ গেটের সামনে জড়ো হয়। তাদের কারও হাতে ছিল লোহার রড, হকিস্টিক, বাঁশের লাঠি এবং দেশীয় ধারালো অস্ত্র। আতশবাজি, মোটরসাইকেলের হর্ন, গালিগালাজ ও ভয়ভীতির মাধ্যমে তারা নিজেদের গ্যাংয়ের শক্তি প্রদর্শন করে।
আজকের পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি সদস্য রহমত বিন হানিফ সেসময়ের ঘটনা বর্ণনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। তিনি তার পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘আজ ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিএনসিসির হয়ে ডিউটি দিয়েছিলাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পরীক্ষার সময়ে বাইরে থেকে মিছিলের শব্দ শুনতে পেলাম। শব্দ শুনে দ্রুত বাইরে এলাম। এসে দেখি অনেক ছোট ছোট ছেলে—তাদের বয়স সর্বোচ্চ ১৬ বছর হবে। তাদের অনেকের হাতে রামদা, ছুরি, চাপাতি ছিল। তারা আতশবাজিও ফোটাচ্ছিল। তাদের কাছে গিয়ে বললাম, এখানে পরীক্ষা চলছে, এভাবে আওয়াজ করবেন না। তারা আমাকে তাদের অস্ত্র দেখিয়ে আরও জোরে আওয়াজ করতে করতে ছুটে চলে গেল। এরপর যখন পুলিশের কাছে বিষয়টি বললাম, তারা একটুও গুরুত্ব দেয়নি।’
পরীক্ষার জন্য আগত অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক নিরাপত্তাহীনতার কারণে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন। একাধিক অভিভাবক বলেন, ‘আমার সন্তান ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছে, আর এমন আতঙ্কজনক পরিস্থিতি দেখে আমরা চিন্তায় পড়ে গেছি। প্রশাসন কী করছে?’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিন ইশরাক মিজার বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে কুমিল্লা শহরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে। এ ক্ষেত্রে কুমিল্লা প্রশাসনের নীরবতাকেই আমি প্রধান কারণ মনে করি। কেননা, এরকম ঘটনা এখন প্রায়ই ঘটছে কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মাঝে মাঝে দু-একজনকে আটক করা হয়, কিন্তু কিছুদিন পর তারা ছাড়া পেয়ে যায়। তাদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তারা পুরোপুরি নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এ শহর আরও অনিরাপদ হয়ে উঠবে বলে আমি আশঙ্কা করি। শহরের এই সমস্যা নিরসনে দ্রুততম সময়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমি এই ঘটনা জানার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।’
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে ৩ জনকে আটক করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’