ফুটপাত দখলকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে হকারকে মারধর
- ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৭:০৬ PM , আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫০ PM

রাজধানীর নিউ মার্কেটের গ্লোব মার্কেট সংলগ্ন ফুটপাতে জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার জেরে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের দুই নেতার নেতৃত্বে হকার হারুনের ওপর মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৭ মার্চ) দুপুরে ফুটপাতের দোকান থেকে ওই হকারকে ধরে নিয়ে গ্লোব মার্কেটের পার্শ্ববর্তী মেঘনা তেল পাম্পে তারা মারধর করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী ও তার সহযোগীদের সূত্রমতে, এই মারধরের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা হলেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সিরাজুম মুনির নায়িব ও ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী দেওয়ান ফজলে হাসান নিয়ন।
মারধরের শিকার হকার মোহাম্মদ হারুন বলেন, আমি ঢাকা নিউমার্কেটে গ্লোব মার্কেটের সামনে দোকানদারি করি। পাঁচ-ছয় বছর যাবৎ শার্টের দোকান করছি। আজকে অনেকদিন যাবৎ একটি গ্রুপ আমার জায়গা (ফুটপাতে দোকান বসানোর স্থান) দখলে নিতে চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন জুম্মার নামাযের পর নিয়ন ও নায়িব ভাই আমার কাছে আসলে পরে আমি বললাম যে, আমরা তো দুই ভাই এখানে ব্যবসা করছি, তাই এখানে জায়গা দেওয়ার কোনো স্কোপ নাই। আমি জায়গা দিতে পারবো না। তখন আমি ভিডিও করছি আমার সেফটির জন্য। উনারা এটা দেখে আমাকে বলছে যে ভিডিও করলি কেন?
‘‘এরপর আমাকে পাম্পের ওখানে এনে মারধর করছে। ওরা পরে ১০/১২ লোক আসছিল। আমাকে দোকান থেকে বেল দিয়ে বেধে ধরে নিয়ে আসছে, এনে পাম্পের এখানে মারছে। হাত দিয়ে যে যেভাবে পারছে থাপ্পড় দিয়েছে, ঘুসি মারছে।’’
এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার বাবা নেই, একটা প্রতিবন্ধী বোন নিয়ে আমি কষ্টে চলতেছি। উনার যেভাবে আমাকে অত্যাচার করেছে এটা আমি আসলে মেনে নিতে পারছি না। আমরা এটা প্রশাসনের মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান চায়।
তিনি বলেন, আমাকে মারধরের বিচার চায়। মারধর করে আমার ফোন নিয়ে গেছে। ফোন নেওয়ার পরে আমি বলছি ফোনটা আমাকে দিয়ে দেন তখন ওরা বলছে ফোন পাবি না। ফোন নিয়ে চলে গেছে আমার ফোন আর ফেরত দেয় নাই।
এ ঘটনা ও দোকান দখলের অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দেওয়ান ফজলে হাসান নিয়ন বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আমি এই ধরনের কোন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাহলে তো আমার কিছু করার নেই।
ফোন ছিনিয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এটার কোনো প্রশ্নই উঠে না। এ ধরনের স্পর্শকাতর ঘটনার সাথে আমি কিভাবে জড়িত থাকতে পারি। এটা অসম্ভব। ক্যাম্পাসে পলিটিক্স করার কারণে অনেকের সাথে যেমন ভালো সম্পর্ক আবার অনেকের সাথে খারাপ সম্পর্ক থাকে। যাদের সাথে খারাপ সম্পর্ক তারা আমার বিরুদ্ধে এটা নিয়ে পলিটিক্স করার চেষ্টা করছে।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুম মুনির নায়িব বলেন, এটা একদম মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এটার সাথে আমার কোনো যোগসাজশ নাই। আমার কাছে যেটা রিপোর্ট আসছে সেটা হচ্ছে পাশাপাশি দুটি দোকানের সমস্যা। এখনো মারামারির কোন ঘটনা ঘটেনি।মারামারির বিষয়টা আমি কিছুই জানি না। যাইহোক আমরা তো সিনিয়ররা গিয়ে মিটমাট করে দিয়েছি ওদের। আর অভিযোগ ভিত্তিহীন।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পিয়াল হাসান বলেন, আমি এই অভিযোগটা কিছুক্ষণ আগে পেয়েছি। আমি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। আমরা শিক্ষার্থীরা তো ওখানে যেতে পারি না ফুটের বিষয়গুলোতে।
তিনি বলেন, যদি তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে এদের সাময়িক অব্যাহতিই নয় একদম স্থায়ী অব্যাহতি এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টিও আমরা দেখব। আমরা চেষ্টা করছি ক্যাম্পাসের সকল সমস্যা কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য। শিক্ষার্থী হিসেবে এগুলো আমাদের জন্য লজ্জার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো মিল্লাদ হোসেন বলেন, আমরা এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানতে পারিনি। আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগেও সকল নেতাকর্মীকে সতর্ক করেছি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর। তারপরও যদি কেউ এ ধরনের দখলদারিত্ব, অন্যায়ভাবে কাউকে মারবে এমন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে আর প্রমাণ পায় তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।