উৎকোচ দিয়েও সরকারি সাহায্য পেলো না ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা
- ঝালকাঠি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫১ PM , আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫১ PM
ঝালকাঠির নলছিটিতে ঘুষের টাকা দিয়েও ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে বাছাই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। উপজেলার মগড় ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের দুই মহিলা ইউপি সদস্য আশা আক্তার ও ময়না বেগম উপজেলা সদ্য সাবেক পরিসংখ্যান কর্মকর্তা উজ্জল কৃষ্ণ বেপারীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তারা লিখিত অভিযোগ জমা দেন সদ্য সাবেক উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা উজ্জল কৃষ্ণ বেপারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এই কর্মকর্তা ঢাকায় হেড অফিসে বদলি হয়ে মঙ্গলবারই নলছিটি ছেড়ছেন।
অভিযোগকারীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে উপজেলার মগড় ইউপির এক শত বায়ান্ন (১৫২) জন ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন দাখিল করেন। আবেদন যাছাই বাছাই করতে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা উজ্জ্বল কৃষ্ণ বেপারীকে মৌখিক নির্দেশে দেন উপজেলা নির্বার্হী অফিসার। জমা দেয়া নামের তালিকা সরেজমিনে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তদন্তে যান উজ্জ্বল। ইউপি সদস্যদের দেওয়া তালিকা বাছাইয়ে ঠিক রাখার আশ্বাস দিয়ে ওই কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। ইউপি সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে ওই ঘুষের টাকা তুলেন। ৫ অক্টোবর গৃহ নির্মাণের জন্য সরকারি সাহায্য জনপ্রতি এক বান্ডিল টিন ও ৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে টিন ও টাকার চেক বন্টনকালে ইউপি সদস্যদের দেওয়া তালিকার অনেকেই এই সাহায্য পায়নি।
টাকা তোলার বিষয়টি স্বীকার করেন মগড় ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য আশা আক্তার। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ জনের নামের তালিকা ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) স্যারের মৌখিক নির্দেশে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে জমা দেই। সরেজমিনে যাচাইয়ে তা ঠিক রাখার জন্য ট্যাগ অফিসার উজ্জল কৃষ্ণ বেপারীকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে পনের জনের জন্য ১৫ হাজার টাকাও তুলে দেই। কিন্তু তার দেওয়া তালিকার ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ সাহায্য পায়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তারা ভাবছেন তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি ওই কর্মকর্তাকে টাকা দেননি।
তিনি আরও জানান, ওই কর্মকর্তা ইউনিয়নের ১২ জন ইউপি সদস্যের কাছ থেকেই ওই হারে টাকা নিয়েছেন। এখন হয়তো অনেকেই তা স্বীকার করবেন না। অপর ইউপি সদস্য ময়না বেগম জানান, তিনি ৫ জন ক্ষতিগ্রস্তের জন্য ওই কর্মকর্তাকে ৫০০০ টাকা দিয়েছেন। তারাও কেউ সাহায্য পায়নি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কর্মকর্তা উজ্জ্বল কৃষ্ণ বেপারী সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরেজমিনে গিয়ে যাদের ঘরবাড়ির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ দেখেছি, তাদের নাম ঠিক রেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তালিকা দিয়েছি। তাতে অভিযোগকারী ওই মেম্বার সাহেবদের দেওয়া তালিকা থেকে যারা সাহায্য পাওয়ার যোগ্য তাদের কয়েকজনের নামও দিয়েছি। কিন্তু কেন তারা সাহায্য পায়নি তাতো আমি বলতে পারব না। আমিতো চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ নই। আমি শুধু যাচাই বাছাই করেছি। ইউএনও স্যার চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মেম্বর সাহেবদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে তারা এসব কথা বলছেন।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সমস্ত উপজেলায় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে টিন ও টাকার চেক স্বচ্ছভাবে বন্টন করা হয়েছে। যেটা সবাই জানে। আমি ওই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এরপর ওই মেম্বার সাহেবদেরকে বলেছি যদি একান্ত ক্ষতিগ্রস্ত কেউ সাহায্য না পেয়ে থাকেন, তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।