আওয়ামী রাজনীতির প্রভাবে অনিয়ম, বিদ্যালয় ছেড়ে পালালেন প্রধান শিক্ষক

কামাল হোসেন
কামাল হোসেন  © ফাইল ফটো

ভোলার চরফ্যাশনের মুজিবনগর ইউনিয়নের চর লিউলিন বাংলাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শিক্ষালয়টির প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন একদিন বিদ্যালয়ে গেলেও পরবর্তীতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, উন্নয়ন খাত ও অর্জিত খাতের টাকা এবং প্রতিষ্ঠানে অনুকূলে বরাদ্দকৃত বিবিধ সরঞ্জাম আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তার সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষক ও অভিভাবকরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে বিদ্যালয় ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। 

স্বামী প্রধান শিক্ষক হওয়ায় স্কুলে না গিয়ে ও ১০ বছর ধরে বেতন তুলছেন বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদাউস।

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৯২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে এনটিআরসি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ২ জনসহ ৫ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী আছে। এদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক কালে-ভদ্রে স্কুলে গেলেও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদাউস ২০১৫ সনে নিয়োগ পেলেও একদিনের জন্যও স্কুলে যাননি। স্বামী প্রধান শিক্ষক হওয়ায় স্কুলে না গিয়ে ও ১০ বছর ধরে বেতন তুলেছেন ওই শিক্ষিকা।

গুরুতর অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরা স্কুলে গিয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে পারেন না। এক দেড় মাস পর পর প্রধান শিক্ষক যেদিন স্কুলে যান, সেদিন সকলে হাজিরা খাতায় পেছন থেকে সব স্বাক্ষর করার সুযোগ পান। ওই বিশেষ দিনে স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউসের স্বাক্ষর প্রধান শিক্ষক নিজেই দিয়ে দেন। ক্ষমতার পালাবদলের পর প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতি, সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদাউসের অনিয়ম, হাজিরা খাতা প্রকাশ্যে আনাসহ নানান ইস্যুতে অভিভাবকরা স্কুলে আসতেই প্রধান শিক্ষক গা-ঢাকা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: সভাপতি-সুপারের নানা অনিয়ম: মাদ্রাসায় না এসেই ১২ বছর ধরে বেতন নেন সভাপতির ভাগ্নি

বিদ্যালয়ের সদ্যবিলুপ্ত ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতা দাতা সদস্য মো. বাবুল মিয়া জানান, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আলমিরা,পুরাতন টিন-কাঠ, সীমানা প্রাচীরের কাঁটাতার,ল্যাপটপ, কম্পিউটার, সোলার প্যানেল সব বিক্রি করে খেয়েছেন। একই ভাবে তিনি বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা। তিনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা হওয়ায় তার অনিয়মের কাছে অসহায় ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকরা।

শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফি, রেজিস্ট্রেশন, টিউশন ফি, উপ-বৃত্তিসহ সব অর্জিত আয় কোন হিসেব ছাড়া এককভাবে আত্মসাৎ করেছেন। তিনি অদৃশ্য ক্ষমতার বলয়ে থেকে তিনি এসব অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি শিক্ষকদের চাকুরি হারানোর হুমকি দিতেন তাই কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই এসব অন্তহীন অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিবাকরা মুখ খুলতেই তিনি বিদ্যালয় ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

আরও পড়ুন: বিজ্ঞানের ল্যাব নেই ৩০ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে

প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন আত্মগোপনে থাকায় তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে তার কোন সাড়া না পেয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হবে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। খতিয়ে দেখে খুব দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence