৪ ফাঁসির আসামির জেল পালানোর গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানায়

বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে দেয়াল টপকে পালায় চার আসামি
বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে দেয়াল টপকে পালায় চার আসামি  © সংগৃহীত

বগুড়া জেলা কারাগারের জাফলং সেলের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ছিলেন চার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তারা ৪ দশমিক ১০ ইঞ্চির লোহার পাত ও ৭ ইঞ্চির একটি স্ক্রু ড্রাইভার ব্যবহার করে ছাদ ফুটে করা শুরু করেন। এ কাজে সময় নিয়েছেন ২০ দিনের বেশি। চারজন মিলে ধীরে ধীরে ছাদের দেয়াল ঘষে ফুটো করেন। সেটি তাঁরা গামছা দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। জেল থেকে পালানোর গল্প সিনেমাকেও হার মানায়।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগার থেকে পালানোর পর তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছেন তারা। গত মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে বগুড়ার জলেশ্বরীতলায় কারাগারে এ ঘটনা ঘটে। এর মূল ফটকের সামনেই করতোয়া নদী। উত্তরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পশ্চিমে পুলিশ সুপার ও পৌরসভার কার্যালয়। তাদের পালানোর বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ শহরজুড়ে পাহারা বসায়।

কারাগার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চেলোপাড়া চাষিবাজারের মাছের আড়ত এলাকা থেকে ভোরে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন তাঁরা।কারাগারের সব সিসি ক্যামেরা সচল নেই জানিয়ে পুলশ বলছে, ৭০০ বন্দী ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে ২ হাজার ২০০ বন্দী আছেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি একটি সেলে ছিলেন। সেখানে কারারক্ষী যাওয়ার সুযোগ ছিল না। যে জায়গায় ফুটো করা হয়েছে, তা ভেতরে না ঢুকলে বোঝার উপায় নেই। এ ঘটনায় ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।

আসামিদের কাছ থেকে লোহার পাত ও স্ক্রু ড্রাইভার জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির কাছে কীভাবে গেল, তান তদন্ত করা হচ্ছে বলে জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। জাফলং সেলের নিরাপত্তায় কারারক্ষীরা থাকেন। দেয়ালের বাইরের অংশের নিরাপত্তায় ১২ জন দায়িত্ব পালন করেন।

চারজন ২৬ দিন ধরে এক সেলে ছিলেন। সেই কনডেমড সেলে বসেই পালানোর পরিকল্পনা করেন। অ্যালুমিনিয়ামের বালতির হাতল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ইট–সুরকির ছাদ ফুটো করেন। ছিদ্রটি তারা গামছা দিয়ে ঢেকে রাখতেন। সুযোগ বুঝে সেই ছিদ্র দিয়ে ছাদে বেরিয়ে আসেন চারজন। পরে লোহার খাঁচা পেরিয়ে পান বাইরের উঁচু সীমানা প্রাচীর। বিছানার চাদর, গামছা ও লুঙ্গি গিঁট দিয়ে রশি পাকিয়ে প্রাচীর টপকে বেরিয়ে এসেছিলেন তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, ব্রিটিশ আমলে তৈরি কারাকক্ষের ছাদ তৈরি হয়েছিল ইট, বালু ও চুন–সুরকি দিয়ে। কোনো রড ছিল না। ফলে ছাদ ছিদ্র করতে সমর্থ হয়েছিলেন তাঁরা। চার আসামির মধ্যে একজন কুড়িগ্রাম, একজন নরসিংদী এবং বাকি দুজনের বাড়ি বগুড়ায়। একজন কাহালু পৌর মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে।

আরো পড়ুন: চট্টগ্রামগামী ট্রেনে তরুণীকে ধর্ষণ, এসএ করপোরেশনের তিন কর্মী আটক

চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, চার আসামি নদীর পাড় ধরে ফতেহ আলী সেতুর দিকে এগিয়ে যান। সেতুর কাছে কয়েকটি কুকুর হঠাৎ ঘেউ ঘেউ শুরু করে। পরে যুবকেরা সেখানে এসে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তারা রাজমিস্ত্রি পরিচয় দেন। তারা জানান, মালিক মারধর করায় রাতে পালিয়ে এসেছেন। তাঁদের কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে না হওয়ায় যুবকেরা এক কাউন্সিলরকে ফোন করেন। তখন তাদেরকে পুলিশে দিতে বলেন।

আসামি পালানোর ঘটনায় কারাগারের জেলার মো. ফরিদুর রহমান মামলা করেন। এতে উল্লেখ করা চার কয়েদি হলেন- কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার নজরুল ইসলাম ওরফে মজনু, নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার আমির হোসেন, বগুড়ার কাহালু পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া এবং বগুড়ার কুটুরবাড়ি পশ্চিম পাড়ার ফরিদ শেখ।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জাকারিয়াসহ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকে ১ জুন থেকে কনডেমড সেলে রাখা হয়। ২ জুন পরিদর্শনকালে কনডেমড সেলে তাদের একসঙ্গে দেখেন। তারা মাত্র ২৫ দিনেই পালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence