আইডিয়ালের ঘটনায় হাইকোর্টে জামিন চান অধ্যক্ষ ফৌজিয়া
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:৩৫ PM , আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:৩৫ PM
কলেজ ছাত্রীকে প্রলোভন ও জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আগাম জামিন চেয়েছেন মতিঝিল আইডিয়ালের অধ্যক্ষ ফৌজিয়া রশিদ। সোমবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হতে পারে আজ।
এর আগে গত ১০ আগস্ট কলেজ ছাত্রীকে প্রলোভন ও জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। সেই সঙ্গে একই মামলায় আইডিয়ালের অধ্যক্ষ ফৌজিয়া রশিদকেও এ আসামি করা হয়। ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীর বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, তার মেয়ে (ভুক্তভোগী) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ওই ছাত্রীকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে আসামি তাকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন।
কিছুদিন পর আসামি মুশতাক ওই ছাত্রীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন। পরে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দেন।
মুশতাকের এ ধরনের আচরণের বিষয়ে আইডিয়াল অধ্যক্ষকে (২ নম্বর আসামি) ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন ভুক্তভোগী। তবে তিনি (অধ্যক্ষ) ব্যবস্থা করছি বলে আসামি মুশতাককে তার রুমে নিয়ে আসেন। সেসময় ভুক্তভোগীকেও ক্লাস থেকে নিয়ে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে মুশতাককে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন।
এ বিষয়ে বাদী কলেজের অধ্যক্ষের কাছে প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করেননি। বরং আসামি মুশতাককে অনৈতিক কাজে সাহায্য করে আসতে থাকেন। বাদী উপায় না পেয়ে গত ১২ জুন তার মেয়েকে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর আসামি মুশতাক তার লোকজন দিয়ে তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর বাদী জানতে পারেন মুশতাক ভুক্তভোগীকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছেন এবং যৌন নিপীড়ন করেছেন।
এ ঘটনায় এর আগে চলতি বছরের ২৫ মার্চ একই প্রক্রিয়ায় প্রথমে নোটারি করে পরে স্কুলের অদূরে বিজয়নগরের একটি কাজী অফিসে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। তখন এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল।
দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্য কর্তৃক এভাবে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ের ঘটনায় ধিক্কার ও নিন্দার ঝড় এবং একই সাথে তখন ওই সদস্যের নামে মতিঝিল এলাকায় পোস্টারিং হয়। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, উল্লিখিত ছাত্রী আর বৃদ্ধ জিবি সদস্যের গলায় গাঁদা ফুলের যে মালা দেখা গেছে, সে রকম একটি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের গলায়ও ঝুলছিল বিয়ের সময়।
ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় শত শত রিসোর্ট আর পিকনিক স্পট থাকা সত্ত্বেও খন্দকার মুশতাকের বাগানবাড়িতে ১৮ মার্চ কলেজ ছাত্রীদের শিক্ষা সফর আয়োজন করা হয়। সেখানে তারা ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পান বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা। তার এক সপ্তাহ পরই বিয়ের ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধ এবং ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি এবং ছাত্রী ও বৃদ্ধকে দুপাশে রেখে অধ্যক্ষের ছবি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
এমন ঘটনার পর সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ফোরাম পরিচালনা কমিটিতে অভিযোগ দায়ের করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ মে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ওই ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের নোংরা ছবি দিয়ে ব্ল্যাক-মেইল করে এবং ফুসলিয়ে-প্রলোভন দিয়ে তার মেয়েকে বিয়ে করেছেন উল্লিখিত ব্যক্তি। তিনি সত্তরোর্ধ্ব এবং ছয়টি বিয়ে করেছেন এখন পর্যন্ত, কিন্তু কারও সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।
বিয়ের হলফনামা অনুযায়ী, খন্দকার মুশতাক ও ছাত্রীটি একসঙ্গে চলার কারণে পরস্পরকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে বিয়ে করছেন। কাবিননামায় উসমান গণি ও রতন সরকার নামে দুপক্ষের দুজনের উকিলের নাম রয়েছে।