ভালো নেই মাইলস্টোনের সবুজা খালাও

হাসপাতালের বেডে সবুজা বেগম
হাসপাতালের বেডে সবুজা বেগম  © টিডিসি সম্পাদিত

আগুনের লেলিহান শিখায় চারপাশ যখন জ্বলছিল, ক্লাসরুম ভরে উঠেছিল আতঙ্ক আর চিৎকারে, তখন সবাই প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল বাইরে। কিন্তু একজন ঠিক উল্টো পথে ছুটলেন। পুড়ে যাওয়ার ভয়, মৃত্যুর মুখ, কোন কিছুই তাকে থামাতে পারেনি। কারণ আগুনের ভেতর ছিল তার ‘শিশুরা’, যাদের তিনি নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করতেন, আগলে রাখতেন পরম মমতায়।

এটা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আয়া সবুজা বেগমের কথা। শিক্ষার্থীরা যাকে ভালোবেসে ডাকত ‘খালা’ বলে। এই একটি ডাকেই ছিল তার পরিচয়, তার দায়িত্ববোধ। আর সেই দায়িত্ব থেকেই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন আগুনের মুখে, সন্তানসম শিশুদের বাঁচাতে নিজের জীবনকে বাজি রেখেছিলেন নিঃশব্দে, নিঃস্বার্থভাবে।

সবুজা খালা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে কাজ করছিলেন দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্লে-গ্রুপের ছোট্ট শিশুদের ছায়া। কখনও মুখ মুছিয়ে দেওয়া, কখনও খাওয়ানো, আবার কখনও কান্নারত শিশুকে কোলে তুলে শান্ত করা, এসবই ছিল তার প্রতিদিনের দায়িত্ব, যেগুলোর মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক নিঃশব্দ ভালোবাসা।

আরও পড়ুন: দেশের জন্য আমরা মরার শপথ নিয়েছিলাম, শিশুরা নয়—এয়ারফোর্স অফিসার

দুর্ঘটনার ভয়াবহ মুহূর্তে নিজের জীবন বাজি রেখে যেভাবে অন্যদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন, তা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শবুজা বেগমের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরা।

তার বীরত্বের এ গল্প সাজিদান রাফসান নামের একজন ফেসবুকে পোস্ট করে জানান, বিধবা মেয়ে রুমানাকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার সবুজা বেগমের। দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগতে থাকা স্বামীকে মাত্র ৪৩ দিন আগে স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয়েছেন তিনি। তাই সবুজা খালাই ছিলেন সংসারের ভরসা। তারপরও বুক বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিলেন পরিবারের জন্য, মেয়ের জন্য, এবং সেই শত শত শিশুর জন্য, যাদের হাসিমুখ প্রতিদিন তার চোখে ছিল আশার আলো। 

ফেসবুক পোস্টে ওই ব্যক্তি আরও জানান, মাইলস্টোনের ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার সেই অগ্নিকাণ্ড, সবকিছু বদলে দেয়। আগুনের সূত্রপাতের পর, ভয়াবহ আতঙ্কে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছিল। সবুজা খালাও বেরিয়ে এসেছিলেন... কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারেন, তার প্রিয় শিশুরা ভেতরে রয়ে গেছে। তখন আর কিছু ভাবেননি তিনি। এক মুহূর্তের জন্যও নিজের প্রাণ নিয়ে চিন্তা করেননি। ছুটে গিয়েছেন আগুনের ভেতর, ফিরে এনেছেন শিশুদের, একজন, দুজন করে, নিজের শরীর পুড়িয়ে, বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন জীবনের সর্বোচ্চ দিয়ে। 

ওই ব্যক্তি আরও জানান, শেষবার যখন তাকে দেখা যায়, তিনি নিজের পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে ক্লাসরুম থেকে আরেকটি শিশুকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসছিলেন। এখন তিনি হাসপাতালে, আইসিইউ-এর ৫ নম্বর বেডে। পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

আরও পড়ুন: ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশ নিয়ে যা জানালেন এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান

অপর আরেকটি ফেসবুক পোস্টে হৃদয়বিদারক এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত সবুজা বেগমের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা পরিবারের পক্ষে একা বহন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সাজিদান রাফসান। মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে সবুজা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছে সাজিদান রাফসানদের টিম। শুধু সবুজা বেগমই নন, দুর্ঘটনায় আহত আরও অনেকেই রয়েছেন যাদের প্রয়োজন দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা, তাদের সবার পাশে দাঁড়াতে তাদের টিম চেষ্টা করছেন বলে জানান সাজিদান রাফসান। এ জন্য চিকিৎসার জন্য ফান্ড সংগ্রহে কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence