দখল-দূষণে মুমূর্ষু যশোরের খরস্রোতা ৪ নদী

আবর্জনায় ভরে আছে নদী
আবর্জনায় ভরে আছে নদী  © সংগৃহীত

একসময়ের খরস্রোতা ও প্রাণচঞ্চল যশোরের চার নদ-নদী আজ দখল ও দূষণের ভারে অস্তিত্ব সংকটে। শিল্পবর্জ্য, হাসপাতালের অপরিশোধিত মেডিকেল বর্জ্য এবং অবৈধ দখলের চাপে ভৈরবসহ চিত্রা, মুক্তেশ্বরী ও কপোতাক্ষের পানি পরিণত হয়েছে বিষাক্ত তরলে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক পরীক্ষায় ভৈরব নদের পানিতে ভয়াবহ দূষণের প্রমাণ মিলেছে, যা শুধু জলজ প্রাণীর নয়—মানবস্বাস্থ্যের জন্যও বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর জেলার রিসার্স অফিসার সৌমেন মৈত্র জানান, শহরের দড়াটানা ও বারান্দীপাড়া ব্রিজ এলাকার পানিতে অক্সিজেনের তীব্র সংকট রয়েছে, যার ফলে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে ভৈরব নদের পাড়ে বসবাসকারী মানুষদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, নদীর পানির জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান ডিজলভ অক্সিজেন (ডিও)। জলজ প্রাণীর শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ডিওর মান সাধারণত ৫ শতাংশের বেশি থাকা আবশ্যক। কিন্তু পরিদর্শনে দেখা গেছে, দড়াটানা পয়েন্টে ডিওর মান পাওয়া গেছে মাত্র ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ ও বারান্দীপাড়া ব্রিজ পয়েন্টে এই মান ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ডিওর এই নিম্ন মাত্রা প্রমাণ করে নদীটির এই অংশের প্রাণবায়ু দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, যা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি।

অন্যদিকে দূষণের মাত্রা নির্দেশকারী অন্যতম প্রধান সূচক জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন (বিওডি) স্বাভাবিকের তুলনায় বহুলাংশে বেড়ে গেছে। বিওডি মূলত পানিতে থাকা জৈব পদার্থ পচনের জন্য অণুজীবদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের চাহিদা বোঝায়। এর উচ্চ মান নির্দেশ করে পানিতে পয়োনিষ্কাশন বা অন্যান্য জৈব বর্জ্যের মারাত্মক উপস্থিতি। যেখানে এই মান ৬-এর নিচে থাকা স্বাভাবিক, সেখানে দড়াটানা পয়েন্টে এর মান পাওয়া গেছে ৯ এবং বারান্দীপাড়া ব্রিজ পয়েন্টে তা ১০।

ডিওর নিম্নস্তর এবং বিওডির এই উচ্চমাত্রা সম্মিলিতভাবে নদীর পানির তীব্র দূষণ ও বিষাক্ততা প্রমাণ করে বলে জানিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্ল্যা। তিনি বলেন, এই দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে মানবদেহে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। উচ্চ বিওডি মানে পানিতে রোগ সৃষ্টিকারী প্রচুর পরিমাণে জীবাণু ও পচনকারী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি। এই দূষিত পানি নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ব্যবহার করলে সাধারণ মানুষ কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়ের মতো মারাত্মক পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও, ত্বকের সংক্রমণসহ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। নদীর এই অবনতিশীল পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি এবং দূষণরোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

‘দূষণের জন্য প্রধানত ২৮ প্রতিষ্ঠান দায়ী’
যশোরের একসময়ের খরস্রোতা চার নদ-নদী- উত্তরে ভৈরব, পূর্বে চিত্রা, দক্ষিণে মুক্তেশ্বরী ও পশ্চিমে কপোতাক্ষ। এককালের প্রমত্তা এই নদীগুলোর এখন মুমূর্ষুদশা। অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত স্থাপনা-শিল্প নির্মাণ, হাসপাতাল ও গৃহস্থালী বর্জ্যের ভারে নদীগুলো সংকুচিত ও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এতোই ভয়াবহ যে, এই নদীগুলো এখন জেলার দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ।

যশোর শহরের বুক চিরে চলে গেছে ভৈরব। নদটি উত্তরদিক থেকে যশোর জেলায় প্রবেশ করেছে। এটি জনপদের উত্তর-পশ্চিম দিক (কোটচাঁদপুর, চৌগাছা) হয়ে শহরের পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। তবে দখল আর দূষণে নদ পরিণত হয়েছে খালে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভৈরব, হরিহর ও কাজলা নদীর তীরে অবস্থিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চালকলসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা মিলিয়ে মোটা দাগে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দূষণের অভিযোগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু যশোর সদর ও নওয়াপাড়া এলাকার ২৪টি প্রতিষ্ঠান ভৈরবে অপরিশোধিত মেডিকেল বর্জ্য ও শিল্প-বর্জ্য ফেলছে।

দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, যশোর পৌর এলাকার কুইন্স হসপিটাল, অসীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কিংস হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবজোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা নার্সিং হোম, অর্থোপেডিক হাসপাতাল, ইউনিক হাসপাতাল, ওরিয়ন হোটেল ইন্টারন্যাশনাল, ভৈরব হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, দড়াটানা হসপিটাল, একতা হসপিটাল, মডার্ন হসপিটাল, রেনেসাঁ হসপিটাল, প্রিন্স ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আলট্রাভিশন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্ক্যান হসপিটাল এবং দেশ ক্লিনিক।

এদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানকে কয়েকদফা নোটিস, পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বারীনগর ও নওয়াপাড়া এলাকায় ভৈরব নদ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এসকে অটো রাইস মিল, ফয়সাল জিলেটিন, পালস ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং জারবান ফাইবার্স লিমিটেড। এরমধ্যে পালস ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা ও আরোগ্য সদন হাসপাতালকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, হরিহর নদ দূষণে দায়ী মণিরামপুরের বেপারী অটো রাইস মিল, দি প্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাব সাদ মেডিক্যাল সার্ভিসেস। এরমধ্যে বেপারী অটো রাইসমিলকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

কাজলা নদী দূষণে সরাসরি দায়ী বাঘারপাড়ার নারকেলবাড়িয়া ডক্টরস ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ প্রতিষ্ঠানটিকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্টদের মতে, পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিস বা ছোট আকারের জরিমানা ‘রোগ নিরাময়’ নয়, ‘উপশম’ মাত্র। অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকলেও, সেগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এছাড়াও, ইটিপি স্থাপনের জন্য চিঠি দেওয়া হলেও নিয়মিত তদারকির অভাব রয়েছে। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় নদ-নদীগুলোর এমন মুমূর্ষু দশা বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

পৌর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, দু-একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা কিংবা মামলা করে কোনো লাভ হবে না। সময় এসেছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার।

ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ =বলেন, বিভিন্ন সময় যশোরের নদী সংস্কারের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের বেশিরভাগের ফলাফলই হতাশাজনক। নদীকে ঘিরে চলমান দখলদারত্ব ও দূষণরোধে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।

মুক্তেশ্বরী দখল করে ভবন নির্মাণ
নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দখলদাররা ভবন নির্মাণ, ময়লা ফেলার ভাগাড় হিসেবে পরিণত করা এবং মাছ চাষসহ নানা কাজে ব্যবহার করছে একসময়ের প্রবহমান মুক্তেশ্বরীকে। এই নদীটি জেলার দক্ষিণ দিকের মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরও দক্ষিণে হরি নদীর সঙ্গে মিশেছে।

মুক্তেশ্বরীর অংশবিশেষ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে যশোরের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান আদ-দ্বীন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ। যশোর জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অনেক চেষ্টা করেও নদীর জমি উদ্ধার করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে। পাউবোর একটি সূত্র জানায়, আদ-দ্বীন কর্তৃপক্ষ নদীর জায়গা দখলের কথা স্বীকার করলেও তা ছেড়ে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসংলগ্ন এলাকা, মণ্ডলগাতি, পুলেরহাট অংশে কোথাও কোথাও নদীর দুই পাশ দখল করে সরু করা হয়েছে, নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা। আবার কোথাও নেটপাটা ও বাঁশের বেড়া দিয়ে নদীর প্রবাহ আটকে মাছচাষ করছেন দখলদাররা। ফলে এক সময়ের প্রবহমান নদীটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

পুলেরহাট এলাকার এক চা দোকানি বলেন, এক সময় নদীতে খুব স্রোত ছিল। নদীপাড়ের লোকজন নানা অজুহাতে জমি দখল করে নিয়েছে। এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে এই স্রোতধারা। দীর্ঘদিনেও খনন কিংবা নদী সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। ছোট ছোট খাল হিসেবে যে যার মতো দখল করেছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও খনন ছাড়া নদীটিকে বাঁচানো সম্ভব না।

কচুরিপানায় ভর্তি কপোতাক্ষ
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত ২৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ কপোতাক্ষ একসময় ৭৫০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত ছিল। সেসময় নদের ওপর দিয়ে বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার চলতো। কিন্তু বর্তমান চিত্র একেবারেই ভিন্ন। নদটি ভরাটের পাশাপাশি এর দুই পাড়ের জমি দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ, মাছ ও ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফলে স্রোতধারা ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এ নদ দিয়ে নৌকাযোগে বিভিন্ন পণ্য আনা নেওয়া হতো। নদ-সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ একসময় মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি কপোতাক্ষ এখন মৃতপ্রায়।

ঝিকরগাছার বাসিন্দা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদী আন্দোলনের প্রবীণ সংগঠক অনিল বিশ্বাস জানান, আশির দশকেও তিনি ঝিকরগাছার বাঁকড়া থেকে গঙ্গানন্দপুর পর্যন্ত গিয়েছেন লঞ্চে চেপে। তখনও কপোতাক্ষ স্রোতস্বিনী ছিল।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদ ২০টি উপজেলা, দশটি পৌরসভা ও ৯৫টি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এর মধ্যে চৌগাছার তাহেরপুর থেকে ঝিকরগাছার ছুটিপুর পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার। এ অঞ্চলের নারায়ণপুর, পেটভরা, টেঙ্গুরপুর, চৌগাছা, কংশারিপুর, দিঘলসিংহা, মাশিলা, কদমতলা, কাবিলপুর, খলশিসহ অনেক স্থানে নদের জমি দখল করা হয়েছে। এ ছাড়া নদের সীমানার মধ্যে শতাধিক স্থানে বাঁশের পাটা দেওয়া হয়েছে। নদের যে অংশ একটু ফাঁকা, সেখানে আবার কচুরিপানায় ভর্তি।

কপোতাক্ষে প্রাণ ফেরাতে ২০১১ সালে নদ খননের প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) শেষ হয় ২০১৭ সালে। যদিও এতে খুব একটা সুফল পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে খননকাজ শুরু করে পাউবো। এতে ব্যয় হচ্ছে ৫৩১ কোটি টাকা। দুই প্রকল্পে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮১৭ কোটি টাকা।

চিত্রা যৌবন হারিয়েছে আগেই
চিত্রা নদী তার যৌবন হারিয়েছে আগেই। দিন দিন বাড়ছে দূষণ। এতে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি ও জীববৈচিত্র্য। যশোর সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রা। ২০২০ সালের ৩০ জুলাই নিজেদের ওয়েবসাইটে নদী দখলদারের তালিকা প্রকাশ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। সেই তালিকায় বাঘারপাড়া উপজেলায় চিত্রা নদীর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, নদীটি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে রাজনৈতিক কার্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, পুকুর, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি। আংশিক তালিকায় এই নদীর ওপর ৪১ অবৈধ দখলদার রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পরে নদীর অবৈধ দখলদারদের যে পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেওয়া হয়, তাতে ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

বাঘারপাড়া বাজারের পাশে চিত্রার ওপর ২০১১ সালে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এই সেতুই বেশি ভোগাচ্ছে চিত্রাকে। নদীর দুই পাড় মাটি দিয়ে ভরাট করে সেতুটি নির্মাণের ফলে তার স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেতুর পূর্ব দিকে চিত্রা নদীর ১১৮ হেক্টর এলাকাজুড়ে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছের অভয়াশ্রম। দেশি মাছের উৎপাদন বাড়াতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা এটি। কিন্তু নদী দখল ও দূষণে অভয়াশ্রমটিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

নদীগুলোর বর্তমান অবস্থা ও নতুন উদ্যোগের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, চিত্রা নদীর যশোর অংশে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯ কিলোমিটার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু হওয়ার কথা চলতি সপ্তাহে। কপোতাক্ষ নদের দ্বিতীয় পর্যায়ে খননকাজ বাকি পাঁচ কিলোমিটার; যা আগামী বছরের ২৬ জুন শেষ হওয়ার কথা। সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া অংশে মুক্তেশ্বরীর ভরাটকৃত অংশ উদ্ধারের জন্য শিগগির সার্ভের কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া ভৈরব নদের শহর অঞ্চলের ২৬ কিলোমিটার নতুন করে ড্রেজিংয়ের চিন্তা করছে পাউবো।

নদীগুলোর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভবদহ অঞ্চল। অবৈধ দখল ও পলির কারণে কপোতাক্ষ, চিত্রা ও মুক্তেশ্বরী নদীর গতিপথ রুদ্ধ হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই ভবদহ এলাকার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন। জেলার নদীগুলোর দখলদারদের একটি তালিকা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন প্রকাশ করলেও উচ্ছেদ কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে স্রোতধারা ক্রমে মরা খালে পরিণত হচ্ছে।

সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মকসুমুল হাকিম চৌধুরী যশোর সফর করে নদীগুলোর অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তিনি মুক্তেশ্বরী, আপারভদ্রা, হরিহরসহ অন্যান্য নদীর দখল চিত্র দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী কেশবপুরে আপারভদ্রার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence