রহস্যময় রাজার পাহাড়: শেরপুরের গারো পাহাড়ের রাজা
- আরফান আলী, শেরপুর
- প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২৬ PM
ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলার শ্রীবরদী পৌর শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে কর্নঝোরা বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত রাজার পাহাড় স্থানীয়দের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন স্পট। বছরের প্রায় সব সময়ই শত শত মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন, উপভোগ করেন পাহাড়ের নির্মল পরিবেশ।
গারো পাহাড়শ্রেণির মধ্যে রাজার পাহাড়ের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। যদিও এর বৈশিষ্ট্য সিলেট বা বান্দরবানের পাহাড়ের মতো নয়, সবুজের ঐশ্বর্যে এটি কোনো অংশে কম নয়। পাহাড়ের চূড়ায় শতাধিক হেক্টরের সমতল ভূমি রয়েছে। উপরে উঠলেই দূরের আকাশ যেন আরও কাছে মনে হয়। সরু পথ আর অদ্ভুত নির্জনতা, সঙ্গে বুনো পাখির ডাক—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত স্বর্গীয় অনুভূতির সৃষ্টি করে।
রাজার পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা যায় আশপাশের কর্ণঝোড়া, মালাকোচা, দিঘলাকোনা, হারিয়াকোনা, চান্দাপাড়া, বাবেলাকোনাসহ ভারতের সীমান্ত এলাকা। পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে ঢেউফা নদী, যা বর্ষাকালে হয়ে ওঠে আরও মনোরম। শীতে নদী শীর্ণকায়া হলেও এর কুলকুল ধারা থেমে থাকে না। নদীর বালুচর অনেকটা বিকল্প সমুদ্র সৈকতের মতো লাগে।
পাহাড়ের পাশেই রয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনপদ বাবেলাকোনা। গারো, হাজং ও কোচ অধ্যুষিত এই গ্রাম যেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের চলমান জীবনসংগ্রামের এক জীবন্ত নিদর্শন। এখানে রয়েছে বাবেলাকোনা কালচারাল একাডেমি, যেখানে আছে জাদুঘর, লাইব্রেরি, গবেষণা বিভাগ ও মিলনায়তন। এটি আদিবাসীদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সংগ্রামের এক বিরল দলিল।
যা দেখবেন: রাজার পাহাড়ের বিশাল সমতল ভূমি ও সবুজের শোভা, ঢেউফা নদীর মনোরম বালুচর ও ধারা, ভারতের সীমান্ত এলাকার দৃশ্য, বাবেলাকোনা আদিবাসী জনপদ ও কালচারাল একাডেমি।
ভ্রমণ পরামর্শ: সকাল বা বিকালে ভ্রমণ সবচেয়ে উপভোগ্য। আরামদায়ক জুতো, পর্যাপ্ত পানি ও হালকা খাবার সঙ্গে রাখুন। বৃষ্টির মৌসুমে যাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ পথ পিচ্ছিল হতে পারে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এলাকায় গেলে তাদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।
যেভাবে যাবেন: ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ড্রিমল্যান্ড, আনন্দ, তুরাগসহ বিভিন্ন এসি ও নন-এসি বাসে সরাসরি শেরপুর যাওয়া যায়। ভাড়া ১০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। শেরপুর শহর থেকে স্থানীয় পরিবহনে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দূরের কর্ণঝোরা বাজারে পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে অল্প দূরেই রাজার পাহাড়।
অতিরিক্ত আকর্ষণ: শেরপুরে এলে কাছাকাছি গজনি অবকাশ কেন্দ্র, মধুটিলা ইকোপার্ক, নাকুগাঁও স্থলবন্দর, নয়াবাড়ি টিলা, পানিহাতার তারানি পাহাড় ও সুতানাল দীঘিও ঘুরে দেখা যায়।
রাজার পাহাড় শুধু একটি পাহাড় নয়, এটি ইতিহাস, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এক মহামিলন। একবার গেলে এই পাহাড়ের সৌন্দর্য আপনাকে বারবার ফিরিয়ে আনবে।