টেকনাফে মহাসড়ক দখল করে বসে মাছের বাজার, তীব্র যানজট
- টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৯ PM , আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০০ PM
কক্সবাজারের টেকনাফে মহাসড়ক দখল করে চলছে রমরমা মাছ ও তরিতরকারির বাজার। সন্ধ্যা নামলেই শত শত ব্যবসায়ী সড়কের ওপর দোকান বসিয়ে বিক্রি করেন মাছ ও সবজি, যা গভীর রাত পর্যন্ত চলে। এতে টেকনাফ ঝর্ণা চত্বর থেকে আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ পথচারী ও যাত্রী।
মহাসড়ক দখল করে মাছ ও সবজির ব্যবসা করলেও নির্বিকার টেকনাফ থানা-পুলিশ। নেই কোনো ট্রাফিক শৃঙ্খলা। দীর্ঘ সময় মাছের ট্রলি নিয়ে বসে থাকে ব্যবসায়ীরা। স্টেশন জামে মসজিদের সামনেও বসে শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী। মাছের পানি ও রক্তের দুর্গন্ধে এই পথে চলা দায়। এতে বরফ গলা পানিতে ভিজে যায় সড়ক। স্যাঁতসেঁ নোংরা পানি ও দুর্গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।
পথচারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কের ওপর মাছ বাজারের কারণে চলাচল করতে পারেন তার। পরিবহন চলাচলে নিয়মিত বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকাতে মাছের পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কোনো না কোনোভাবেই দুর্ঘটনা সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এসব তীব্র যানজটের মূল কারণ হচ্ছে, মাছ ও তরিতরকারি ব্যবসায়ীদের অবৈধভাবে সড়ক দখল করে মাছের বাজার বসে, যা মাছের দোকান আরও সংকীর্ণ করে ফেলেছে সড়ক। ফলে মারাত্মক রূপ নেবে যানজট।’
সরেজমিন দেখা যায়, টেকনাফের ঝর্ণা চত্বর থেকে ইউটার্ন পর্যন্ত পুরো সড়ক মাছ ও তরিতরকারি ব্যবসায়ীর দখলে। আজান দিলে মসজিদে মুসল্লিদের যেতে নানা বিপত্তি ঘটে। সড়কের পশ্চিম পাশে দুই শতাধিক খুচরা ও পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী সড়ক দখল করে বসে আছেন। যেখানে ক্রেতাদের উপস্থিতিও প্রচুর। মানুষের চাপে উভয় পাশে সড়কে লেগে থাকে তীব্র যানজট।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, মাছ বাজার বসায় প্রতিদিন চলাচলে অনেক সমস্যা হচ্ছে। সন্ধ্যা হলে যানজটের তীব্র আকার ধারণ করে। যানজটের কারণে মুসল্লিদের নামাজে যেতে কষ্ট হয়। প্রায় দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। জরুরি কোনো কাজে গেলে আটকে যায়। ইমার্জেন্সি কোনো রোগী নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে চাইলে যাওয়া যায় না।
নাছির নামের এক অটোচালক বলেন, ‘মাছ ব্যবসায়ীরা রাস্তা দখল করে থাকে। তাদের কারণে আমরা গাড়ি চালাতে পারি না ঠিকমতো। একদিকে তিন রাস্তার মাথা, অন্যদিকে একটু সামনে গেলেই ইউটার্ন তার মাঝখানেই মাছ বাজার। হর্ন দিলেও সাইড দিতে চান না মাছ ব্যবসায়ীরা। এ জন্য অনেক সময় মাছ ব্যবসায়ীদরে সঙ্গে ঝগড়া ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।’
কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ‘পালকি’ বাসের চালক মো. আমিন বলেন, ‘কী আর বলব ভাই! গাড়ি চালানোর রাস্তা নেই। একটা গাড়ি আরেকটা ছোট গাড়িকে যে সাইড দেবে, সে পরিস্থিতি এ সড়কে নেই। দিন দিন মাছের দোকানের সংখ্যা বাড়তেছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এই একটু জ্যাম থেকে বের হতেই আধা ঘণ্টার ওপরে সময় লেগে যায়।’
মাছ কিনতে আসা এক তরুণ বলেন, ‘এ একটু সড়ক পুরোটাই মাছ ব্যবসায়ীর দখলে। মনে হচ্ছে সড়কটাই পুরো মাছ ব্যবসায়ীর। তারা পুরো সড়কে মাছের ঝুড়ি দিয়ে দখল করে ফেলে। বাজারের তুলনায় এখানে কিছুটা দাম সাশ্রয়ী। ফলে অনেক ক্রেতাই এখানে এসে ভিড় জমায়। কিন্তু রাস্তার ওপর দোকান বসায় চলাচল করতে অসুবিধা হয়। এ ছাড়া হেঁটে যাওয়ার সময় মাছের পানি গায়ে এসে পড়ে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাছ ব্যবসায়ী সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্দিষ্ট মাছ বাজার আছে। কিন্তু আমরা তো টাকার বিনিময়ে ব্যবসা করি। আমাদের কাছ থেকে তো ভাড়া নিচ্ছে। তাই সন্ধ্যা হলেই এখানে বাজার বসায়।’
এ বিষয়ে টেকনাফ বণিক সমবায় সমিতির সহসভাপতি ওসমান গণি বলেন, ‘সন্ধ্যা হলেই এই মাছ বাজার খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পুরো রাস্তা ব্লক করে রাখে মাছ ব্যবসায়ীরা। যার কারণে রাস্তায় কোনো গাড়ি স্বাভাবিকভাবেই যাতায়াত করতে পারে না। তীব্র যানজটের সৃষ্টি করে। নামাজে যেতে পারি না, মসজিদের সামনের সাইড দখল করে রাখে। সকাল হলেই দুর্গন্ধ এর জন্য ওই দিকে যাওয়ায় যায় না।’
টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এ রোড দিয়ে আমি নিজেই চলাচল করি। এটার জন্য আমি নিজেই ভুক্তভোগী। এ বিষয়ে ইউএনও স্যারকে অবগত করেছি। আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইউএনও স্যার একটা সময় নির্দিষ্ট করলে আমরা এ বিষয়ে দ্রুত অভিযানে বের হব। এর আগে টেকনাফ বাজারে একটা অভিযান চালিয়েছি। যেখানে সিএনজি আর অটোরিকশাগুলোর স্ট্যান্ড ছিল, সেখানে উচ্ছেদ অভিযান করে অনেক দোকান উঠিয়ে দিয়েছি৷ এ অভিযানেও সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’