বিদ্যালয়ের জমি দখল করে কৃষক লীগ নেতার দোকান, সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাধা
- গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৪ AM , আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০১:৫৫ AM
পটুয়াখালীর গলাচিপায় বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়িয়া এ.বি. বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কৃষক লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের জমিতে অবৈধভাবে দোকানঘর স্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি। স্কুল কতৃপক্ষ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েও জমি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক দশক আগে বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মোল্লা বিদ্যালয়ের জমির একটি অংশ দখল করে সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করেন। দোকানটিতে চা, পান, সিগারেট সহ বিভিন্ন পন্য বিক্রয় করে আসছেন তিনি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনসাধারণ বহুবার তাকে দোকান সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানালেও তিনি নানা অজুহাত ও প্রভাব খাটিয়ে দখল বজায় রেখেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের খতিয়ানভুক্ত জমি—মৌজা: গুয়াবাড়িয়া, জে.এল.নং-৫৭, খতিয়ান নং-৪৪৮, দাগ নং-২৫৪৩, ২৫৫৪, ২৫৫৫, ২৫৫৭, ২৫৫৮, মোট জমি: ১.৪৪ একর—এর মধ্যে ওই দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। দখলের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি, ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জমির মালিকানার সকল কাগজপত্র বিদ্যালয়ের নামে রয়েছে তারপরও অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে শাহাবুদ্দিন মোল্লা।
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের আশপাশে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি, আড্ডাবাজি, ও বখাটেপনার মতো ঘটনা বেড়ে গেছে, যা শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের পাশে বিদ্যালয়ের পুকুর। পুকুরের পাড় ঘেঁষে জমির ওপর গড়ে উঠেছে দোকান, যেখানে চা, পান, বিড়ি-সিগারেটসহ খাদ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের কিছু অংশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হলেও দোকানের কারণে সম্পূর্ণ করতে পারছে না।
অভিযুক্ত সাহাবুদ্দিন মোল্লার ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাবা, দাদার নামে রেকর্ডীয় সম্পত্তি ব্যবহার করতেছি। আমরা কোন জোর করে দখল করিনি। আদালতে মামলা করেছি এখন আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান হবে। আর শাহাবুদ্দিন মোল্লার শ্যালক মো. জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, জমিটি তারা ক্রয়সূত্রে পেয়েছেন এবং বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. ওহাব মিয়া জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। যেহেতু বিষয়টি দখল উচ্ছেদ পর্যায়ে, তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া শাহাবুদ্দিন মোল্লা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৪/৪৫ ধারা একটি মামলা করেছে। সেটির তদন্তভার পেয়েছি আমরা উভয়পক্ষকে নোটিশ করে ডাকবো, তাদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জমির মালিকানা নির্ধারণ করবো।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
উল্লেখ্য, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের স্বারক নং ২১৭৭/৫ তারিখ ২৫/০৬/২৫ এক চিঠিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের আওতাধীন যেসকল দপ্তর/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি প্রতিষ্ঠানের দখলে ও দলিলাদি সংরক্ষণে নেই সেসকল প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।