টানা বৃষ্টিতে কদর বেড়েছে ছাতা কারিগরদের
- যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৫ AM , আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ১০:২৫ AM
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। যশোরে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ছাতা কারিগরদের কদর বেড়েছে। সেই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে তাদের কাজের। এ বছর আষাঢ় মাসের শুরু থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। একটানা বৃষ্টি হওয়াতে ছাতার ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। যার ফলে, ঘরে পড়ে থাকা নষ্ট ছাতা ব্যবহার উপযোগী করতে অনেকেই ছুটছেন কারিগরের কাছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সারা বছর তেমন একটা কাজ থাকে না ছাতা কারিগরদের। তবে বর্ষা যেন তাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ, বর্ষা এলেই কদর বাড়ে তাদের। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে যশোর শহরের ছাতা কারিগররাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৃষ্টিতে ভিজে গ্রাহকের ছাতা মেরামতে ব্যস্ত তারা। শহরের দড়াটানা, চিত্রা মোড়, মাইকপট্টি, পোস্ট অফিস মোড়, চৌরাস্তা, বস্তাপট্টি, আর এন রোড নতুন বাজার, রেল বাজার, ফায়ার সার্ভিস মোড়, চারখাম্বার মোড়, টিবি ক্লিনিক মোড়, আশ্রম মোড়, মণিহার, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, পালবাড়ি মোড়, নতুন খয়েরতলা বাজার, খয়েরতলা বাজার, ধর্মতলা, চেকপোস্ট, আরবপুর মোড়, পুরাতন চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজারসহ বিভিন্ন মোড়ে ছাতা মেরামতের কাজ করছেন কারিগররা।
আরও পড়ুন: ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে আজ
বর্ষাকালে এসব অঞ্চলে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে মৌসুমী কারিগররা ছাতা মেরামত করেন। নষ্ট ছাতা মেরামত করার জন্য লোকজনের ভিড়ও হচ্ছে। কারিগরদের ব্যস্ততা অনেকটা বেড়েছে। তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে একটানা কাজ করে যাচ্ছেন।
যশোরের রেলবাজারে ফুটপাতে ছাতা মেরামতে ব্যস্ত ছিলেন কমলেশ মজুমদার। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে তিনি ছাতা মেরামতের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে কাজও বেশী হয়। স্বাভাবিক পরিবেশের চেয়ে বৃষ্টির দিনে ছাতা মেরামতের কাজ একটু বেশি হয়। এসময় তিন থেকে পাঁচ শত টাকা উপার্জন করা সম্ভব। টানা বৃষ্টিতে অনক সময়ে এক হাজার টাকা থেকে বারো হাজার টাকার কাজ করেছি। তবে অন্য সময় তেমন একটা কাজ থাকে না। ছাতা মেরামতের সামগ্রীর দাম বেড়েছে। ভাল করে কাজ করতে বেশ সময় লাগে। সেইজন্য বর্ষার মৌসুম ছাড়া ছাতা মেরামতের তেমন কাজ হয় না।
দিব্য সরকার। বাড়ি আরবপুর রেললাইনের পাশে। তিনি থাকেন বসবাস করেন বস্তিতে। পেশায় তিনি পাদুকা শ্রমিক। ছাতা মেরামতের কাজও তিনি পারেন। তিনি বলেন, বাপ-দাদার জাত পেশা তাই এ কাজে আছি। তাছাড়া অন্যকাজ শিখিনি। সেইজন্য এ পেশায় পড়ে আছি। মূলত জুতা সেলাইয়ের করেন তিনি। সব সময় এ কাজের চাহিদা আছে। বর্ষার সময় ছাড়া ছাতা মেরামতের চাহিদা নেই। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। সেইজন্য সবার ছাতার কথা মনে পড়েছে। ছাতা মেরামতের বেশ কাজ হচ্ছে। প্রতিদিন তার এক হাজারের উপরে আয় হচ্ছে।
আর এন রোড় নতুন বাজারের ছাতার কারিগর গনেশ দাশ বলেন, ছাতার কারিগরদের দুর্দিন চলছে। বৃষ্টির মৌসুম না এলে কাজ হয় না। তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশাই গেছে।আবার অনেকে পূর্বপুরুষের এ পেশা ছাড়তেও পারেনি। পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এ পেশায় কেউ আসতে চায় না। তাই দিন দিন এই পেশার কারিগররা হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কাজের ব্যস্ততাও বেড়েছে। উপার্জনও বেশ ভাল হচ্ছে।
আব্দুর রহমান। উপশহরে তার বাড়ি। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েরা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। এখন বৃষ্টির সময়। বাতাসে ছাতার শিক ভেঙ্গে গেছে, তাই স্কুল ও প্রাইভেট পড়তে গেলে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। ছেলেমেয়েদের জন্য ছাতা দুইটা মেরামত করতে এসেছি।
দড়াটানা মোড়ের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, বর্ষায় ছাতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেইজন্য পড়ে থাকা তিনটি ছাতা মেরামত করে নিয়েছেন তিনি। তিনটি ছাতা মেরামত করতে ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। ছাতা মেরামত করতে বেশ ভীড় হচ্ছে। দাঁড়িয়ে থেকে তিনি কাজ করিয়ে নিয়েছেন।