‘জুলাই যোদ্ধা’ অনুদান পেলেন যুবলীগ নেতা

সি ক্যাটাগরির আওতায় এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ
সি ক্যাটাগরির আওতায় এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ  © সংগৃহীত

খুলনায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সময় আহত হওয়া যুবলীগের এক সাবেক নেতা ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে এক লাখ টাকার অনুদান পেয়েছেন—এমন অভিযোগে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মিনারুল ইসলাম। যিনি তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। 

জানা গেছে, গত ১৪ মে তিনি খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ‘আহত জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে সি ক্যাটাগরির আওতায় এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন।

২০২৩ সালের ৪ আগস্ট খুলনায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গুলিবর্ষণ ও হামলার একপর্যায়ে পালানোর সময় আহত হন মিনারুল। পরে তার চেক গ্রহণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সি ক্যাটাগরিতে খুলনায় মোট ৬৩ জনের জন্য চেক আসে, যার মধ্যে ৫০ জন তা গ্রহণ করেন। মিনারুলও তাদের একজন। তার চেক জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হাত দিয়ে হস্তান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মণ্ডল জানান, সাধারণত আবেদনগুলো উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই হয়—যার মধ্যে পুলিশ, চিকিৎসা সনদ, এবং জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র প্রতিনিধিদের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়। পরে তা জেলা কমিটির সভায় অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মিনারুল সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন, এবং যাচাই-বাছাই শেষে তার নাম গেজেটে প্রকাশ করে চেক পাঠানো হয়েছে। ফলে তার আবেদন সংক্রান্ত কোনো তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে ছিল না।

তিনি আরও জানান, কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করলে সেটি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়ে গেজেট থেকে নাম প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হবে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মিনারুল ইসলাম প্রথমে ফোনে জানান যে তিনি জরুরি বৈঠকে আছেন এবং পরে ফোন করবেন। কিন্তু এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। একপর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।

তেরখাদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এফ এম মফিজুর রহমান বলেন, “মিনারুল ইসলাম আমাদের মধুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। জুলাই আন্দোলনের সময় সে এলাকায়ই ছিল। ৪ আগস্ট সমাবেশে যোগ দিতে খুলনায় যায় এবং পালাতে গিয়ে আহত হয়—এমনটিই শুনেছি।”

তৎকালীন খুলনা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামালও নিশ্চিত করেছেন যে, মিনারুল ৪ আগস্ট তাদের সঙ্গেই ছিলেন। তিনি বলেন, “ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় মিনারুল কার্যালয় থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয় এবং তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।”


সর্বশেষ সংবাদ