নিয়োগে কচ্ছপের গতি, স্কুল-কলেজে দেড় লাখ শিক্ষক সংকট

স্কুল-কলেজে দেড় লাখ শিক্ষক সংকট
স্কুল-কলেজে দেড় লাখ শিক্ষক সংকট  © টিডিসি ফটো

দেশের প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ​শিক্ষক সংকট দূর করতে নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা জটিলতায় তা সম্পন্ন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে স্কুল-কলেজে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষক সংকট রেখেই নতুন বছরের পাঠদান শুরু হতে যাচ্ছে।

যদিও নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শিক্ষক সংকট থাকলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদানে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। এছাড়া প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় দ্রুতই শিক্ষক সংকট দূর হবে। তারা বলছেন, আগামী মার্চ পর্যন্ত প্রচলিত রুটিনেই শ্রেণি পাঠদান হবে। ফলে শিক্ষক সংকটের প্রভাব খুব একটা দৃশ্যমান হবে না।

সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি শিক্ষক সংকট রয়েছে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৪ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। আর বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি। বিপুল সংখ্যক শিক্ষক সংকট রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। ৩২ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২০ সালে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসেবে ২০২১ সালে এই সংখ্যা অর্ধ লাখ ছাড়িয়েছে। এছাড়া বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার ১৫৫ জন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াও আটকে রয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগের প্রিলি, লিখিত এবং ভাইভা শেষ হয়েছে। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ না হওয়ায় আটকে আছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। এর মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে ২ হাজার ১৫৫ জন শিক্ষকের ভেরিফিকেশন কার্যক্রম চলছে। আর বেসরকারি শিক্ষকদের ভেরিফিকেশন চলছে ৩ মাস ধরে।

এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই কচ্ছপ গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরি প্রত্যাশীরা। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার দাবি তাদের। দ্রুত শিক্ষক সংকট দূর করা না গেলে নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি পাঠদানে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই শিক্ষকদের যোগদানের সুপারিশপত্র দেয়ার দাবিও তুলেছেন তারা।

আরও পড়ুন: মেসে আপত্তিকর অবস্থায় ইবি ছাত্র-ছাত্রী

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের যে কথা বলা হচ্ছে সেটি যদি বাস্তবিক অর্থেই হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের পাঠদানে পড়বে। সংশ্লিষ্টদের উচিৎ দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা।

সবচেয়ে বেশি সংকট বেসরকারি স্কুল-কলেজে

দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেগগুলোতে প্রায় এক লাখ শিক্ষকের সংকট রয়েছে। ২০২১ সালে শিক্ষক নিয়োগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেরসকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। প্রতিষ্ঠানটি গত মার্চে ৫৪ হাজার ২৮৩ জন শিক্ষক নিয়োগের লক্ষে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে রেকর্ড পরিমান আবেদন হলেও নিয়োগের জন্য ৩৮ হাজার ২৮৩ জনকে সুপারিশ করা হয়।

বিভিন্ন নিবন্ধনের রিটকারীদের জন্য ২ হাজার ২০০টি পদ সংরক্ষণ করে বাকি পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। আবেদন না পাওয়ায় এবং মহিলা কোটায় যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদ ফাঁকাই রয়েছে। এছাড়া ৬ হাজার ৩ জন প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণ করে না পাঠানোয় ৩২ হাজার ২৮৩ জনের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে। সুপারিশপ্রাপ্তদের পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম চলমান থাকায় কবে এই নিয়োগ সম্পন্ন হবে সেটি নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না এনটিআরসিএ।

নিয়োগ কার্যক্রমের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেরসকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রার্থীদের ভেরিফিকেশন হওয়ায় এটি শেষ হতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে আমরা সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ করার অনুরোধ করেছি।

প্রাথমিকে শূন্য ৫০ হাজার পদ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। এতে আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন। প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৪০ জন। করোনার কারণে সেসময় পরীক্ষা নিতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। চলতি বছর একাধিকবার এই নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হলেও সেটিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি অধিদপ্তর।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট ৩২ হাজার ৭৭টি শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫ হাজার ৬৩০ জন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে ৬ হাজার ৯৪৭ জনকে নিয়ােগ দেওয়া হবে।

নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন বই বিতরণের কর্মসূচি চলায় চলতি মাসে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলে প্রাথমিকের শিক্ষক সংকট দূর হবে বলেও জানান তিনি।

ভেরিফিকেশনে আটকা ২১৫৫ শিক্ষক নিয়োগ

সরকারি স্কুলে নন-ক্যাডারে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। এই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দুই হাজার ১৫৫ জনকে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

চূড়ান্ত ফল প্রকাশের এক বছর অতিক্রম হলেও এখনও সুপারিশপ্রাপ্তরা নিয়োগ পাননি। পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণেই তাদের নিয়োগ কার্যক্রম আটকে আছে। করোনার কারণে পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভেরিফিকেশন শেষ হলেই সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ আদেশ জারি করা হবে।

আইসিটি শিক্ষক সংকট চরমে

সরকারি কলেজে  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের শিক্ষক সংকট চরমে। ২০১৩ সালে আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হলেও এই বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে মাত্র একবার। ২০১৬ সালে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক নিয়োগের লক্ষে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন। এরপর আর কোনো বিসিএসেই এই বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি।

জানা গেছে সারাদেশে সাড়ে ৬ শতাধিক সরকারি কলেজ এবং প্রায় ৬ হাজার ৭০০ বেসরকারি কলেজ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি কলেজ মিলে উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ২৬ লাখ ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করছেন। তাদের প্রত্যেকেরই আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হয়। সরকারি কলেজগুলোতে আইসিটি বিষয়ে পড়ানোর শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৭০ জন।

আইসিটি শিক্ষক সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সদ্য বিদায়ী সচিব মো. মাহবুব হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মুজিব শতবর্ষে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকের ঘাটতি থাকবে না। এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে বেসরকারি স্কুল-কলেজ বিপুল সংখ্যক আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আর সরকারি কলেজে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক সংকটও দূর করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence