কোটা পদ্ধতির পুনর্বহাল, ছাত্র আন্দোলন নিয়ে যা বলছেন নুর-মামুন

কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলন  © টিডিসি ফটো

গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই দুই শ্রেণির নিয়োগে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সেটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

এছাড়াও গত ৯ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্ট বিভাগের রায় আপাতত বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন ধার্য করা হয়।

কোনোপ্রকার প্রলোভনে পড়ে বিভক্ত না হয়ে ২০১৮ সালে যাদের নেতৃত্বে কোটা আন্দোলন সফল হয়েছে তাদের নিয়ে সারা বাংলাদেশের ছাত্রদের অংশগ্রহণে কমিটি গঠিত হলে আন্দোলনে সফলতা আসবে-নুরুল হক নুর, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা

তবে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়,  কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পর্যায়ে হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবি জানান। তাদের দাবী, কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল থাকলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মেধাবীদের চাকরি হয় না। এজন্য ২০১৮ সালে ৭ মাস আন্দোলনের মাধ্যমে যে কোটা পদ্ধতি রহিত করেছিল সেটি আদালতের মাধ্যমে ৫ বছরে বেশি সময় পর সেটি পুনর্বহাল একটি চক্রান্ত। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের গতিবিধি কিংবা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে ২০১৮ সালে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতাদের সাথে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের তাদের পরিকল্পনা নিয়ে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন জানান, বাতিল হওয়া প্রজ্ঞাপনটি ২০১৮ সালের অক্টোবরের ৪ তারিখে। তার আগে ছাত্রসমাজের তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন কোটা থাকবে না। 

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর ছাত্রসমাজ শ্রেণীকক্ষে ফিরে যায়। কিন্তু তার পরে ব্যক্তিগতভাবে আমাদের মধ্যে ফারুক হাসান, রাশেদসহ যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের সবাইকে বিভিন্ন মামলা এবং একাধিকবার ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন কর্তৃক হামলার শিকার হতে হয়। আমরা গুরুতর আহতও হই। 

আপনাকে জানিয়ে রাখতে চাই, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন আমরা কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু করি, তখন আমরা হাইকোর্টের দারস্থ হয়ে রিট করি যে, হাইকোর্ট এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবেন কি-না! তখন আদালত আমাদের বলেছিলেন, কোটা রাখা কিংবা না রাখার এখতিয়ার আদালতের নয়, এটা সম্পূর্ণ নির্বাহী বিভাগের। 

পরবর্তীতে আমরা দেখেছিও তাই, নির্বাহী বিভাগের আদেশে কোটা রহিত করা হয়। ফলে আমরা অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে আন্দোলন থেকে ফিরে যায়। জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সর্বশেষ চারটি বিসিএস কোটা ছাড়াই যারা নিয়োগ পেয়েছে, সবাই কর্মস্থলে যোগদান সম্পন্ন করেছেন। এ ছাড়া প্রিলি এবং রিটেন সহ সর্বমোট ৬টি বিসিএস চলমান রয়েছে।

কিন্তু সম্প্রতি যেটা ঘটেছে, কোটা পুনর্বহালের রায় এসেছে এবং এটি হাইকোর্ট থেকে সুপ্রীম কোর্টে চলে গিয়েছে। আমরা মনে করি, বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকারের ইন্ধনেই হয়েছে। তারা কোটা বহাল রাখতে চায়।

আমরাও এ বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কোনোভাবেই কোটা রাখা চলবে না। আমাদের দাবি আদায় হওয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, আমরা নিজেদের উজাড় করে সেটি আদায় করে নিব। সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সাথে সাথে কলেজ, মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব।

২০১৮ সালে যখন আন্দোলন শুরু করি, তখন শুধু ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের বাধা নয়, বরং বারংবার হামলা মামলার স্বীকার হয়েছি। এমনকি গণমাধ্যমের সামনে আমাদের পেটানো হয়। তবুও আমরা আন্দোলন থেকে পেছনে যাইনি। তাই এবারও আমরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে তৈরি রয়েছি। যেকোনো মূল্যে, যত বাঁধাই আসুক দাবী আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরব-হাসান আল মামুন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা

আন্দোলনে নেতৃত্বের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি জানান, এবারের কোটা বিরোধী আন্দোলনে এখন পর্যন্ত কোন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়নি। তবে আমি এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিলে ভর্তি আছি। আমার চাকরির বয়সও আছে। ২০১৮ সালে যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম এবং বর্তমানেও সারা দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের শিক্ষাজীবন চলমান আছে সবার সমন্বয়ে আগামী দিনের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। 

আন্দোলনে সফলতা পেতে দৃঢ় প্রত্যাশা জানিয়ে মামুন জানান, আমরা ২০১৮ সালে যখন আন্দোলন শুরু করি, তখন শুধু ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের বাধা নয়, বরং বারংবার হামলা মামলার স্বীকার হয়েছি। এমনকি গণমাধ্যমের সামনে আমাদের পেটানো হয়। তবুও আমরা আন্দোলন থেকে পেছনে যাইনি। তাই এবারও আমরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে তৈরি রয়েছি। যেকোনো মূল্যে, যত বাঁধাই আসুক দাবী আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরব।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, শিক্ষার্থীদের ৩০ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম ছিল। এখনও কোন সমাধান দেখা যায়নি। ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলতে কোন প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হবে সেটি নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। অনেকে দাবি রাখেন, আমি যেন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখি। কিন্তু সেটার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ আমার ছাত্রত্ব নেই এবং বর্তমানে আমি জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় পার করছি।

তবে আমি ইতোমধ্যে জেনেছি, আন্দোলনে নেতৃত্ব নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরী হয়েছে। আমি মনে করি এখানে যারা নেতৃত্ব দিবেন সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কিংবা সংগঠন কর্তৃক তাদেরকে গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে বিভক্ত করে রাখার ষড়যন্ত্র থাকবে। অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের সেরকমই।

তাই, কোনোপ্রকার প্রলোভনে পড়ে বিভক্ত না হয়ে ২০১৮ সালে যাদের নেতৃত্বে কোটা আন্দোলন সফল হয়েছে তাদের নিয়ে সারা বাংলাদেশের ছাত্রদের অংশগ্রহণে কমিটি গঠিত হলে আন্দোলনে সফলতা আসবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence