৪৮ বছরে এই প্রথম অমর একুশে বইমেলায় শিবিরের স্টল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৯ PM , আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৯ PM

‘‘৪৮ বছরে এবারেই আমরা প্রথম বইমেলায় স্টল বরাদ্দ পেয়েছি। গত ১৬ বছর আওয়ামী দুঃশাসনামলে স্টল বরাদ্দ পাওয়া তো দূরের কথা, আমাদের বই পেলেই জঙ্গি বই হিসেবে দেখিয়ে গ্রেফতার করতো। আমাদের শতশত নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে এখন দেশের মানুষ স্বাধীন, আমরা আজাদী পেয়েছি। আমরা এখন মননশীল ও রুচিশীল সাহিত্যে ফোকাস করছি। প্রথমবার মেলায় আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি’’। কথাগুলো বলছিলেন আবু সাদিক কায়েম, যিনি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি।
এবারের অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রমনা কালীমন্দির গেইট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে সামনে এগিয়ে হাতের ডান পাশে ৭৮৪, ৭৮৫, ৭৮৬ ও ৭৮৭ নম্বর স্টলগুলো শিবিরের। আইসিএস পাবলিকেশন নামে রয়েছে স্টলটি।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মেলার ৬ষ্ঠ দিনে শিবিরের এই স্টল ঘুরে দেখা যায়, দর্শকদের প্রচুর ভিড়। দূরদূরান্ত থেকে শিবিরের কর্মীরাও এসেছেন বই দেখতে ও কিনতে। স্টলে পাওয়া যাচ্ছে সাহিত্যের নানা শাখা-প্রশাখার বই। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রকমের বার্ষিক ক্যালেন্ডার।
সাদিক কায়েম বলেন, আমরা মননশীল ও রুচিশীল সাহিত্যে ফোকাস করছি, বেশ সাড়া পাচ্ছি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসছে। আমাদের বই দেখছে, কিনছে এবং উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।
তিনি বলেন, আইসিএস পাবলিকেশন শিবিরের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই রয়েছে। আমরা প্রায় ২০০ রকমের প্রকাশনা সামগ্রী প্রকাশ করে থাকি।
সাদিক বলেন, আমাদের বইগুলোকে জঙ্গি বই হিসেবে দেখানো হয়েছে। আমাদের প্রকাশনায় সমৃদ্ধ সাহিত্যের ভাণ্ডার আছে। এখানে যেমন ধর্মতত্ত্ব নিয়ে বই আছে তেমনি সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সায়েন্স ফিকশন নিয়ে বই আছে। শিশুতোষ অনেকগুলো বই আছে। এর পাশাপাশি স্টিকার আছে। তিন পাতার ক্যালেন্ডার, এক পাতার ক্যালেন্ডার, ইংলিশ ডায়েরি, বাংলা ডায়েরি আছে। উপকরণের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চাবির রিং, কলমদানি ও স্টিকার আছে।
পাশাপাশি চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে কাজ করছেন বলেও উল্লেখ করেন সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, শহীদদেরকে নিয়ে আমরা স্মারক বের করব।
গত ১৬ বছরে আমরা তো অনুমতি পাই নাই। যেখানেই বইগুলোকে পাওয়া গেছে সেখানে জঙ্গি বই হিসেবে দেখানো হয়েছে। ২৪ এর অভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষ কথা বলতে পারছে এবং আমরাও আমাদের আজাদী পেয়েছি। দীর্ঘ ১৬ বছরে আমরা প্রথমবারের মতো অনুমতি পেয়েছি। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সারা দেশ থেকে মানুষ আসতেছে। বিভিন্ন ধরনের মানুষেরা দেখতেছে এবং দেখে তারা উৎসাহ প্রকাশ করছে, যোগ করেন সাদিক কায়েম।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু মাসিক পত্রিকা আছে। ইংরেজি পত্রিকা আছে, বাংলা পত্রিকা আছে। আমাদের প্রায় ৮-৯ ধরনের ম্যাগাজিন বের হয়। সেগুলো আমরা এখানে রাখছি। আওয়ামী দুঃশাসনের ১৬ বছর নিয়ে আমরা একটি বই বের করেছি। এখানে সারাদেশে যত নির্যাতন, নিষ্পেষণ, জুলুম হয়েছে, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নির্যাতন নিস্পেষণ এই ঘটনাগুলোকে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি শহীদী স্মারক আছে। বিভিন্ন আইটেমের বই আছে।
স্টলটাও নান্দনিক ভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্টলটা পুরো মেলার মধ্যে সবাইকে আকর্ষিত করছে। বিশেষ করে তরুণরা আসছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে এসে ছবি তুলছে, তারা তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।
সাদিক বলেন, সব মিলিয়ে ২৪ পরবর্তী সময় দেশের মানুষ যে আজাদী পেয়েছে এবং তাদের যে উচ্ছ্বাস তা আইসিএস পাবলিকেশন বইমেলায় স্টল পাওয়ার মাধ্যমে সেটা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। এবং আমরা মননশীল এবং রুচিশীল সাহিত্যের দিকে ফোকাস দিচ্ছি। আমাদের স্টলসহ বইমেলার সকল স্তরেই আসার জন্য আমরা সকলকে দাওয়াত দিচ্ছি।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী দুঃশাসনামলে অমর একুশে বইমেলাকে রাজনৈতিক মোড়ক দিয়ে রাখা হয়েছিল। ভিন্নমতের কাউকে দেওয়া হয়নি স্টল বরাদ্দ। গুটিকয়েককে দেওয়া হলেও প্রদর্শন করতে পারেনি নিজস্ব মতাদর্শিক বই। ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর ২০২৫ সালের বইমেলায় অন্যরকম আবহ তৈরি হয়েছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাস্তবতায় ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সংস্থা ‘আইসিএস পাবলিকেশন’ স্টল বরাদ্দ পেয়েছে।