ঢাবির কলা অনুষদ
গবেষণাগ্রন্থে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ড. আবুল কালাম সরকার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০২ PM , আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০৪ PM
গবেষণাগ্রন্থে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার। দেশে ও বিদেশে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত মৌলিক প্রবন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক গবেষণাগ্রন্থ (Research Book International) ক্যাটাগরিতে তাকে এই ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ড. মো. আবুল কালাম সরকারসহ কলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের ১৫৬ শিক্ষার্থী ও ১০ শিক্ষকদের হাতে এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। কলা অনুষদে গত তিন বছরের (২০২১-২৩) জন্য এ ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান প্রধান অতিথি এবং প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন ডিনস অ্যাওয়ার্ড স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বিভাগীয় চেয়ারম্যানগণ ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম ঘোষণা করেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী।
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার ধ্রুপদী ফারসি গদ্য, সাহিত্য, ভাষা ও অনুবাদ বিষয়ে নিবেদিত এই প্রজ্ঞাবান গবেষক তার একাডেমিক জীবনে প্রকাশ করেছেন ১২টি গ্রন্থ এবং ৫০টিরও বেশি গবেষণাপত্র দেশি–বিদেশি খ্যাতনামা জার্নালে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৪৮টিরও বেশি সম্মেলনে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন বিশ্ব একাডেমিক পরিমণ্ডলে। তাঁর গবেষণা শুধু ভাষা ও সাহিত্যে নয়, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও দর্শনের এক আন্তঃসম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরে।
বাংলাদেশে ফারসিভাষা ও সাহিত্যের জনপ্রিয়করণে তার ভূমিকা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। এই অনন্য অবদানেরই স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ডিনস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন তাঁর সাম্প্রতিক গ্রন্থ A Mouthful of Sugar in Bangladesh: The Standing of the Iconic Figures of Persian Literature in Bangladesh–এর জন্য।
বইটি প্রকাশ করেছে ইরানের আল্লামা তাবাতাবাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, যা ইরান ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করেছে।
এই গ্রন্থে অধ্যাপক ড. সরকার বিশ্লেষণ করেছেন বাংলা সংস্কৃতিতে ফারসি সাহিত্য ও ভাবধারার প্রভাব, মধ্যযুগীয় বাংলা কবিতায় ফারসি কাব্যধারার প্রতিফলন, এবং দুই ভাষার পারস্পরিক আদান-প্রদান কীভাবে দক্ষিণ এশীয় মানবিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর গবেষণায় ইতিহাস ও ভাষা একসূত্রে গাঁথা—যেমন তিনি নিজেই বলেন, “বাংলার মাটিতে ফার্সির গন্ধ আছে, যেমন আছে ভালোবাসার, মমতার, জ্ঞানের।”
ড. সরকার এর আগেও ২০১৮ সালে গবেষণাগ্রন্থ বিভাগে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডিনস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিলেন। তার ধারাবাহিক সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অঙ্গনের এক অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত।
শুধু একাডেমিক গবেষণায় নয়, ন্যায্যতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তিনি একজন সক্রিয় ও সচেতন নাগরিক। ২৫ বছর ধরে তিনি পেশাজীবী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে শিক্ষক সমাজের কল্যাণ ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন।
একই বিভাগে আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র (Article) বিভাগে অধ্যাপক ড. মুমিত আল রশীদ, বর্তমান চেয়ারম্যান, ডিনস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন।