চাল-গমের বিকল্প হবে কাসাভা—বাকৃবির গবেষণা সাফল্য

চাল-গমের বিকল্প হবে কাসাভা
চাল-গমের বিকল্প হবে কাসাভা  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ-বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক দীর্ঘ সময়ের গবেষণায় দেশে প্রচলিত শর্করার বিকল্প উৎস হিসেবে কাসাভা প্রক্রিয়াজাত করণে সফলতা পেয়েছেন। ধান, গম, চালের উপর নির্ভরতা কমাতে কাসাভা বিকল্প উৎস হতে পারে বলে মতামত দিয়েছেন গবেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ-বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক ও অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির ও তার গবেষণা দল দীর্ঘ সময় ধরে কাসাভা (শিমুল আলু) নিয়ে গবেষণা করে প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

কাসাভা বা শিমুল আলুর মূলের অংশ প্রক্রিয়াজাত করে কাসাভা-অড়হড় রুটি, চিপস, কাসাভা-স্টার্চ, পশুখাদ্য, অড়হড় পাই, কেক, আটা, পাকুড়া, সিদ্ধ কাসাভা আলু, হালুয়া, তেল পিঠা, স্লাইচ, চপস, কাসাভা আলুর তরকারিসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাদ্য ও পানীয় উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে গবেষক দল।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ-বিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলন কক্ষে গবেষণা সম্পর্কে এসব তথ্য তুলে ধরেন অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির। তিনি বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব এবং মাটির অনুর্বরতার বিবেচনায়, দেশের মানুষের শর্করার চাহিদা মেটাতে মাঠ পর্যায়ের গবেষণা করে সফলতা পেয়েছেন।

গবেষক জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম কাসাভা আলুতে ৩০-৩৫ শতাংশ শর্করা, ০ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৭০ শতাংশ আমিষ, ০ দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ২ শতাংশ চর্বি, ০ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ আঁশ, ০ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৬ শতাংশ খনিজ দ্রব্য পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি ও স্বল্প পরিমাণ লৌহ উপাদানও থাকে।

কাসাভার পাতায় ড্রাইম্যাটার (রোদে শুকানোর পরে অবশিষ্ট অংশ) থাকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, আমিষ থাকে শুকনো ওজনের ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ। এই গাছের পাতা, কান্ড এবং মূল সবকিছুই ব্যবহারযোগ্য। এছাড়া পাতায় কিছু পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও লৌহ উপাদানও থাকে।

হেক্টরপ্রতি কাসাভা আলুর গড় ফলন ৩৫ থেকে ৫০ টন যেখান ধানের গড় ফলন ২ থেকে ৩ টন। পাতার ফলন হেক্টরপ্রতি প্রায় ২৫ টন। এ ফসল চাষে মাটির ক্ষয় হয় বলে মূলত বাড়ির পাশের পতিত জমি ও পড়ে থাকা উঁচু জমিতে চাষের জন্য উপযুক্ত। এটি উচ্চ তাপমাত্রা এবং কম উর্বর মাটিতেও জন্মাতে সক্ষম। তবে মানুষ ও প্রাণির জন্য এ খাবার সর্বাবস্থায় সিদ্ধ করে খেতে হবে।

গবেষক ছোলায়মান আলী ফকির জানান, কাসাভা সিদ্ধ করে, পুড়িয়ে এমনকি গোল আলুর মতো অন্যান্য তরকারির সাথেও রান্না করে খাওয়া যায়। কাসাভা আটা গমের আটার সাথে মিশিয়ে রুটি, পরোটা, কেক তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। কাসাভার পাতার প্রক্রিয়াজাতকরণের পর উদ্ভাবিত পিলেট এবং আটা- গরু, ছাগল, মহিষ, মাছ এবং পোলট্রিকে খাবার হিসেবে দেওয়া যায়। কাসাভা গাছের সর্বত্র বিষাক্ত সায়ানোজেনিক গ্লুকোসাইড থাকে। তবে সিদ্ধ বা প্রক্রিয়াজাত করলে এই বিষক্রিয়া আর থাকে না। তাই কাসাভা আটা/স্টার্চ সম্পূর্ণ নিরাপদ। আলু উত্তোলনে মাটি ক্ষয় হওয়ার কারণে ফসলী জমিতে চাষ না করাই উত্তম। এজন্য বড় পরিসরে ব্যাণিজিক ভাবে এর চাষ না করে মাঝারি বা ছোট পরিসরে চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।

তিনি আরোও জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মে চাষ করে হেক্টরপ্রতি ৫০ টন ফলন পাওয়া গিয়েছে। বীজ ও শাখা কাটিংয়ের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার গাছ লাগানো যায়। গাছ লাগানোর ৭ থেকে ১০ মাস পরে আলু উত্তোলনের উপযোগী হয়। আলু তোলার ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে অন্যথায় পচন ধরতে শুরু করবে। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence