যে প্রস্তুতিতে ৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেন তামীম

তামীম হাসান
তামীম হাসান  © টিডিসি ফটো

তামীম হাসান ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৪৮তম হয়েছেন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সি ইউনিটে ৫ম স্থান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটে ৮৯ তম, বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ৯ম স্থান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বি ইউনিটে ২৭৩ তম স্থান অর্জন করেছেন। পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প এবং নতুন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু টিপস নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—নুসরাত তালবিয়া

আপনি ঢাবি, জাবি, চবিসহ মোট ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কী?

আলহামদুলিল্লাহ! এটা আমার জন্য এক অভূতপূর্ব আনন্দের মুহূর্ত। দীর্ঘ প্রস্তুতি, অগণিত রাতের নির্ঘুম অধ্যয়ন, আর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়ে যাওয়া—সবকিছুরই যেন এক অনবদ্য স্বীকৃতি পেলাম এই ফলাফলগুলোর মাধ্যমে। আমি কৃতজ্ঞ আমার পরিবার, শিক্ষক এবং বন্ধুবান্ধবদের প্রতি, যারা সবসময় পাশে ছিল এবং সব পরিস্থিতিতে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছে । 

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন?

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই। আমি যেহেতু আমার পছন্দের সাবজেক্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় দুইটিই পেয়েছি সেহেতু ঠিক করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়বো। এখানের একাডেমিক পরিবেশ, গবেষণার সুযোগ আর অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবে বলে বিশ্বাস করছি।

সাবজেক্ট চয়েজের ক্ষেত্রে কোন সাবজেক্ট প্রেফারেন্স হিসেবে ছিল? 

আমার অর্থনীতি বিষয়টা নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল এবং আলহামদুলিল্লাহ আমি সেটি নিয়ে পড়ার সুযোগও পেয়েছি। অর্থনীতি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা এসেছে বাস্তবতা থেকে। আমি সবসময় চিন্তা করতাম—দেশে দারিদ্র্য, বৈষম্য বা মূল্যস্ফীতি কেন হয়? কীভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়? এই বিষয়ের মাধ্যমেই বুঝতে পারবো মানুষ, সরকার, সমাজ কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, সম্পদ ব্যবহার করে, আর কীভাবে উন্নয়ন সম্ভব। আশা করছি অর্থনীতি আমার এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিবে, আর আমাকে আরও নতুন কিছু সম্পর্কে ভাবাবে।

ভাল সাবজেক্ট নাকি র‍্যাংকিংয়ে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়, কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? আপনার কী মনে হয়?

আমার কাছে মনে হয় এইক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং লক্ষ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কারণ, কেউ যদি ভালো ভার্সিটির এমন কোনো বিষয়ে পড়ে যেটা সে উপভোগ করতে পারছে না, তাহলে সেখান থেকে তার দ্বারা ভালো কোনো কিছু করাটা খানিকটা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে। আর প্রফেশন বা ভবিষ্যতে নিজেকে কী হিসেবে দেখতে চায় সেইটার কথা চিন্তা করে সাবজেক্ট চয়েজ করাটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। কেননা সাবজেক্ট অনুযায়ী পরবর্তী কর্মজীবন নির্ধারণ হবে, যেটিতে কে কোন ভার্সিটি থেকে আসলো সেইটা বেশি প্রাধান্য পাবে না। তবে ভালো ভার্সিটির ভালো একাডেমিক পরিবেশ, অভিজ্ঞ শিক্ষক, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও একজন শিক্ষার্থীর আত্ম-উন্নয়নে অনস্বীকার্য। সর্বোপরি, আমার কাছে মনে হয় সাবজেক্টকেই ভার্সিটির উপরে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

কোন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন?

আমি নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেছি। নটর ডেম কলেজের শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ, অভিজ্ঞ ও অনুপ্রেরণাদায়ী শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা এবং সহপাঠীদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব আমাকে ব্যক্তিগত ও একাডেমিকভাবে আরও পরিপক্ব করে তুলেছে।

ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

আমি ভর্তি প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু করেছিলাম। যেহেতু অ্যাডমিশন পরীক্ষাগুলো হলো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, সেহেতু এখানে অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর জন্য আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নেই সেভাবে এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলে পর্যাপ্ত হবে না। কেননা এখানে পাস করাটা মুখ্য বিষয় নয়, বরং অন্যদের তুলনায় নিজেকে এগিয়ে রাখাটাই মূল বিষয়। আমার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই এডমিশনের প্রিপারেশন একবার শেষ করে ফেলার জন্য। যদিও পরিপূর্ণভাবে সব কিছু পড়ে শেষ করে ফেলতে পারিনি; তবুও ইংরেজির জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতে পারায় আমার এডমিশনের সময়টাতে এইটার প্রতি বেশি তটস্থ থাকতে হয়নি। কেননা কম বেশি সবাই ইংরেজি বিষয়টা নিয়ে একটু বেশি তটস্থ থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমি অন্যান্য বিষয়ের প্রতি খুব ভালোভাবেই সময় বণ্টন করতে পেরেছিলাম। এছাড়াও আমি কোনো একটি বিষয় পড়ার সময় সেটি সূক্ষ্মভাবে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম, যার কারণে আমাকে অনেকগুলো বই সংগ্রহ করতে হয়েছিল। আমি যে টপিক পড়তাম সেই টপিক বিভিন্ন বই থেকে খুঁটিনাটি সব কিছুই পড়ে ফেলতে চেষ্টা করতাম। যার ফলে আমার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করতো যে এই টপিক থেকে যেভাবেই প্রশ্ন আসুক না কেনো আমার আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। এছাড়াও আমি পড়াশোনা করার সময় প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক স্যারের কথাটি মনে রাখতাম। কথাটা প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক স্যারের ভাষাতেই বলি—

“পড়ার কাজটি অইল অন্যরকম। আপনে যখন মনে করলেন, কোনো বই পইড়্যা ফেলাইলেন, নিজেরে জিগাইবেন যে বইটা পড়ছেন, নিজের ভাষায় আপনে বইটা আবার লিখতে পারবেন কিনা।” তাই আমি যখন পড়তাম তখন পরবর্তী টপিকে যাওয়ার আগেই নিজে সেইটা আরেকজনকে বুঝাতে পারবো এমন আয়ত্ত না আসা পর্যন্ত সেই টপিকটাই পড়তাম।

কখনো কী হতাশা কাজ করেছে? কাজ করলে সেটি কীভাবে কাটিয়ে উঠেছেন?

হ্যাঁ, হতাশা এসেছে। প্রস্তুতির পথে এমন অনেক সময় ছিল, যখন মনে হতো—আমি পারব না। চারপাশের সবার অগ্রগতি দেখে নিজেকে অনেক পিছিয়ে গেছি মনে হতো। এরপর নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম — এখনো শেষ হয়নি, অনেক পথ আছে। ছোট ছোট অগ্রগতিকে গুরুত্ব দিয়েছি, দিনের একটা লক্ষ্য ঠিক করতাম, সেটা পূরণ করবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতাম। পরিবারের সাপোর্ট, কিছু কাছের মানুষের উৎসাহ, আর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা—এসবই মানসিকভাবে সাহস জুগিয়েছে।

প্রস্তুতিকালীন আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?

প্রস্তুতির সময় আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল নিজের স্বপ্ন। মা-বাবার মুখে হাসি দেখার ইচ্ছা আমাকে অনেক রাত জাগতে সাহস দিয়েছে এবং নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ ছিলই সবসময়।

আর ভাবতাম, পথ যত কঠিন হবে শেষটা তত সুন্দর হবে। এছাড়াও ভাবতাম পরীক্ষা হলো একটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। ইতিহাসের পাতায় বহু যুদ্ধের কথা লিপিবদ্ধ আছে যেখানে মানসিক শক্তিহীন শক্তিশালী পক্ষের পতন হয়েছে দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন তুলনামূলক দুর্বল পক্ষের কাছে। তাই সবসময় নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করতাম। আমার দ্বারা হবে না বা আমি কি আদৌ পারবো কিনা– এই ধরনের চিন্তাভাবনা মাথা থেকে দূর করে ফেলতাম বরং সময়টাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেইটা ভাবার চেষ্টা করতাম। এই বিষয়ে Earl Nightingale বলেছিলেন, "You become what you think about." তাই প্রতিক্ষেত্রেই ইতিবাচক মনোভাব রাখতে চেষ্টা করতাম। এই ছোট ছোট ভাবনাগুলোয় ছিল আমার অনুপ্রেরণার শক্তি।

পরীক্ষার হলে কোন কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন?

পরীক্ষার হলে আমি মনে করি, মাথা ঠান্ডা রাখাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর পরীক্ষায় আমি একটা কৌশল অবলম্বন করতাম, সেইটা হলো— আমি প্রথমেই সাধারণ জ্ঞান উত্তর করতাম। সেক্ষেত্রে প্রথমে যেগুলো পারতাম সেইগুলো একনাগাড়ে প্রশ্নে ছোট করে দাগিয়ে ফেলতাম। প্রশ্নে দাগানো শেষ হলে তারপরে প্রশ্নগুলোর উত্তর উত্তরপত্রে ভরাট করে ফেলতাম। এতে অনেক সময় বেঁচে যেতো, কেননা একটা প্রশ্ন পড়ে আবার উত্তর করা, আবার প্রশ্ন পড়া- এতে সময় বেশি অপচয় হয়। আর যে প্রশ্ন পারতাম না, সেই প্রশ্নগুলো স্কিপ করতাম। জিকের পরে ধারাবাহিকভাবে একই পদ্ধতিতে বাংলা এবং ইংরেজির উত্তর করতাম। এরপরে বাকি সময়ে যেগুলো পারতাম না সেইগুলো নিয়ে ভাবতাম এবং চেষ্টা করতাম সব গুলোই উত্তর করে আসার। আমি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই পরীক্ষা শেষ করে ফেলতে পারতাম।

পরবর্তীতে যারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবে তাদের জন্য কী বলতে চান?

জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, কলেজে পড়াকালীন সময় থেকেই বেশি বেশি প্রশ্নব্যাংক সলভ করে ফেলার চেষ্টা করতে হবে; যত বেশি বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করা হবে, তত ভালো আইডিয়া হয়ে যাবে কোন টপিক কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। আর সবসময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে। কোনো সময় কোনো ক্ষেত্রেই হতাশাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। এমনও হতে পারে তুমি তোমার সম্পূর্ণটা দিয়েই চেষ্টা করেছো, কিন্তু আশানুরূপ ফলাফল পাওনি। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, তুমি যেইটা চাচ্ছো কে জানে সেইটাতে হয়তো তোমার জন্য কল্যাণ নেই, কেননা মহান সৃষ্টিকর্তায় উত্তম পরিকল্পনাকারী।  

আর মাথায় রাখতে হবে কোনো কিছু অর্জন করতে না পারার দুঃখ থেকেও অর্জন করতে পারার আনন্দ কোনো ভাবেই বেশি নয়; বরং সমতুল্যও নয়। তাই পরিশেষে আমাদেরকে সবসময় ইতিবাচক স্বপ্ন লালন, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম, মানুষের দোয়া এবং সবশেষে সৃষ্টিকর্তা যা নির্ধারণ করে দিবেন তা মেনে নিয়ে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করার মানসিকতা রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমার ইচ্ছা হলো একজন অর্থনীতিবিদ হওয়া। আমি এমন একজন হতে চাই, যার বিশ্লেষণ ও গবেষণা দেশের নীতিনির্ধারণে কাজে আসবে। দারিদ্র্য, বৈষম্য, মূল্যস্ফীতি বা বেকারত্ব—এই সমস্যাগুলোর বাস্তবসম্মত সমাধানে কাজ করতে চাই। একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমি গবেষণার মাধ্যমে সমাজের গভীর সমস্যা চিহ্নিত করে, সেগুলোর কার্যকর সমাধান বের করতে আগ্রহী। স্বপ্ন দেখি—একদিন দেশের উন্নয়নের নীতিতে আমার চিন্তাও গুরুত্ব পাবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence