অন্ধ স্বামীর অনুপ্রেরণায় রাবি ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন এসিডদগ্ধ সুমাইয়া

স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে এসিডদগ্ধ সুমাইয়া
স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে এসিডদগ্ধ সুমাইয়া  © সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পেছনে গাছতলার নিচে অন্ধ স্বামী দাঁড়িয়ে। পাশে কালো বোরকা পড়ে বসে রয়েছেন এক নারী। হাতে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র। কোলে ১০ মাসের শিশু। সোমবার কথা বলে জানা যায়, বোরকা পড়া মেয়েটির নাম মোসা. সুমাইয়া। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনি আজ এসিডদগ্ধ।

সুমাইয়া বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন ন‌ওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার চৌধুরী চান মোহাম্মদ কলেজ থেকে। স্বামীর অনুপ্রেরণায় অংশ নিচ্ছেন রাবি ভর্তি পরীক্ষায়। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পরীক্ষা দিয়েছেন কিন্তু ভর্তির সুযোগ হয়নি। তাই এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সি' (বিজ্ঞান) ইউনিটে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। রাবিতে ভর্তির সুযোগ পেলে পড়তে চান রসায়ন বিভাগে।
 
পাশে বসে থাকা সুমাইয়ার অন্ধ স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ফজলুল হক। তিনি অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি লিডারশিপ (ওএস‌এল) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার কাছ থেকে জানতে পারি সুমাইয়াকে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে তিনি বিয়ে করেছেন। জীবনসঙ্গী হিসেবে সুমাইয়া ছাড়া তার কোনো গতি নেই। ব‌ইপড়া থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক প্রতিটি কাজে বন্ধুর মতো তার পাশে থাকেন। তারা শেরপুর জেলার সদর থানার শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা।
 
তিনি আর‌ও বলেন, সুমাইয়ার এইচএসসি পরীক্ষার পর লেখাপড়া করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তার অনুপ্রেরণায় সুমাইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। সুমাইয়াকে তিনি ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে গাইডলাইন দিয়ে সাহায্য করেন। সুমাইয়া এসিডদগ্ধ হলেও তার কাছে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারী। তাকে দেখতে না পেলেও অনুভব করেন তিনি।
 
অপর পাশ থেকে সুমাইয়া বলেন, তুমি‌ও আমার একজন ভালো বন্ধু। আমার আজকের এখানে আসার পেছনে তুমিই আছো। এরকম একজন মানুষ হিসেবে কেন বেছে নিলেন জানতে চাইলে সুমাইয়া বলেন, আমি এসিডদগ্ধ নারী। যখন দুর্ঘটনার শিকার হ‌ই, তখন আমি হতাশায় ছিলাম। পরে বুঝতে পারি আমার থেকেও প্রতিবন্ধী কিছু মানুষ আছে, যারা অনেক অসহায়। পরে সিদ্ধান্ত নিই এমন অসহায় একজনকে বিয়ে করবো।
 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা কেমন হলো এমন প্রশ্নে সুমাইয়া বলেন, ভালো হয়েছে। বাকিটুকু আল্লাহ ভরসা। যদি ভর্তি হতে পারি তবে একজন রাজশাহী, অন্যজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। এটা আমাদের দুজনের জন্য বড় পাওয়া হবে।
 
সংসার এবং পড়াশোনার খরচ কীভাবে চলে জানতে চাইলে ফজলুল বলেন, মাসে ৭৫০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। তা দিয়ে কিছু হয় না। আমার স্ত্রী কোনো ভাতা পায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু স্কলারশিপ পাই, তা দিয়ে মোটামুটি চলে যায়। আমরা প্রশাসনের কাছে সহায়তা চাই, যাতে আমরা দু’জন ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারি, বাঁচতে পারি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence