আবেদন ফি: বাণিজ্যিক রূপ ধারণ করেছে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া
- সাগর হোসেন, জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২১, ০৪:২৬ PM , আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২১, ০৪:২৬ PM
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আর ছুটতে হবে না, বাড়ির পাশে কম টাকায় কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই বসা যাবে পরীক্ষায়- এমন সব প্রত্যাশা নিয়ে প্রথমবারের মতো দেশের ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলেও দিন যত গড়াচ্ছে ভর্তি পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ নিয়ে ততই প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ পরীক্ষা পরবর্তী প্রতিটি ইউনিটে আবেদন ফি ৬০০ থেকে শুরু করে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শুরুতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি হিসেবে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করলেও পরে ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়ার মাঝপথে আবেদন ফি ১ হাজার ২০০ টাকা করা হয়। একইসঙ্গে সব পরীক্ষা কর্মদিবসে পড়ায় শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। এ ছাড়া অনেককেই পছন্দের কেন্দ্র না পেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক দূরের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। প্রকৃত অর্থে যে আশা দিয়ে গুচ্ছ পরীক্ষা শুরু হয়েছে তার কোনটিই সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি আয়োজক কমিটি।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী গুচ্ছভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি ইউনিটে আবেদন ফি বাবদ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এ আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সেখানে প্রতিটি ইউনিটে শুধু আবেদন ফি বাবদ ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও ভর্তি আয়োজক কমিটি শুরুতে এরকম ফি নিয়ে স্পষ্ট কোন বক্তব্য দেয়নি। কিন্তু পরীক্ষা পরবর্তী নতুন করে শিক্ষার্থীদের ওপর আবার ইউনিট আবেদন ফি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি ইউনিটে আবেদন ফি হিসেব করলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টি ইউনিটে শুধু আবেদন করতেই শিক্ষার্থীদের গুনতে হবে অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা। এর আগে স্বাভাবিক নিয়মে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় ৫০০ থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা নেওয়া হতো এবং ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী ইউনিটে আবেদনের জন্য কোন ফি নেয়া হতো না। শিক্ষার্থীরা এ 'ফি' কে তাদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
পাশাপাশি এই ‘ফি’ কে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনও।
গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিট থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মো. ফয়সাল নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গুচ্ছের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার ফি ছাড়া ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত আর কোন ফি ধরা না হলেও গুচ্ছের নামে আমাদের কাছ থেকে প্রতিটি ইউনিটের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে। মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারের যারা ভর্তি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ছে তারা এখন টাকার অভাবে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবে না। এটা উচ্চশিক্ষায় বৈষম্য সৃষ্টি করবে। উচ্চশিক্ষার এসব জায়গা যদি বাণিজ্যিক হয়ে যায় তাহলে আমাদের গর্বের আর কি থাকলো?
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী আবেদন ফি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ডিনস’স কমিটির সভায় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবেদন ফি।