বিজ্ঞান বিভাগ

বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে শঙ্কায়-অনিশ্চয়তায় গুচ্ছ ভর্তিচ্ছুরা

সম্প্রতি গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের প্রাথমিক আবেদন করা সব শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত আবেদনের সুযোগ দেওয়া হলেও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ভিন্ন নিয়ম
সম্প্রতি গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের প্রাথমিক আবেদন করা সব শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত আবেদনের সুযোগ দেওয়া হলেও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ভিন্ন নিয়ম  © ফাইল ফটো

সম্প্রতি গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের প্রাথমিক আবেদন করা সব শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত আবেদনের সুযোগ দেওয়া হলেও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ভিন্ন নিয়ম। বিষয়টি নিয়ে বিভাগটির ভর্তিচ্ছুদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ভর্তিচ্ছু তাদের আশঙ্কা এবং হতাশার কথাও জানিয়েছেন।

গুচ্ছের প্রাথমিক আবেদনের ফলাফলে দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০৫ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রথম ধাপের চূড়ান্ত আবেদন করতে পারবেন। এরপর বাকি ৬২ হাজার ৯৩৬ জনের মধ্যে থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ফের আবেদনের সুযোগ পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিজ্ঞান বিভাগে চূড়ান্ত আবেদন কতজন করে সেটা দেখে আমরা আবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আবারও আবেদনের সুযোগ দেবো। অন্যদিকে, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের প্রাথমিক আবেদন সংখ্যা কম হওয়ায় সবাইকে চূড়ান্ত আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

পরীক্ষা ছাড়াই (২০২০ সাল) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়নে পাস করেছেন সবাই। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬২০ জনই বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগের (গ্রুপ) পরীক্ষার্থী। বাকিদের মধ্যে ১৯ হাজার ৬৬৪ জন মানবিক, ইসলাম শিক্ষা ও সংগীত বিভাগের এবং ১০ হাজার ৩৩০ জন ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থী।

এদিকে, পরীক্ষা ছাড়াই ফলাফলের কারণে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন বলে মত সংশ্লিষ্টদের। বিজ্ঞান বিভাগে একদিকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি অন্যদিকে বাকি দুই বিভাগের (মানবিক-বাণিজ্য) তুলনায় এ বিভাগে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। সবমিলিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে প্রতিযোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তুলনামূলক কম জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীরা আবেদনের সুযোগ হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।

বিজ্ঞান বিভাগের এসব শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের সুবিধার জন্য। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গতবছরও মোট জিপিএ ৭.৫/৮ থাকলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ ছিলো সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের আওতাভুক্ত হওয়ায় জিপিএ ৯.৫০ ছাড়া এক্সাম অংশগ্রহণের মাধ্যমে মেধা যাচাইের সুযোগ দেবে না। এছাড়া সেকেন্ড টাইমার যারা বিগত বছর ধরে যারা প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের কি হবে?

তথ্যমতে, ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন ২৩ হাজার ১০৪টি। তবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪০৬ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক আবেদন করেছেন। এতে বিজ্ঞান বিভাগে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪১ জন শিক্ষার্থী, মানবিক বিভাগে ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩৩ এবং বাণিজ্য বিভাগে আবেদন করেছেন ৫৮ হাজার ৬৩২ জন শিক্ষার্থী।

বিভাগ পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থী ঐক্যের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, যেখানে জাবিতে বিজ্ঞান বিভাগে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার এবং ঢাবিতে বিজ্ঞান বিভাগে ১ লাখ ২০ হাজার ভর্তিচ্ছু পরীক্ষা দিতে পারবে, সেখানে ২০টা বিশ্ববিদ্যালয় মিলে ১ লাখ ৯০ হাজারের পরীক্ষা নিতে পারবে না, এটা হাইস্যকর। এসএসসি এবং জেএসসি রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করছে গুচ্ছ কমিটি। আমরা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সিলেকশন পদ্ধতি বাতিল চাই।

এছাড়া গুচ্ছ কমিটির পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা ভর্তি আবেদন ফি নিয়েও রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা। প্রথমে ৬০০ টাকা থাকলেও তা পরবর্তীতে এক হাজার ২ টাকা করা হয়েছে। রাসেল বলেন, কমিটির কর্তা ব্যক্তিরা না হয় কলমের খোঁচায় লাখ টাকা মাসে আয় করেন। কিন্তু, তারা দেশের অস্বচ্ছল পরিবারগুলোর কথা ভাবেন নি। এভাবে তারা বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আমাদের হতাশ করছে। এর আগে ডি ইউনিট নিয়েও তারা মন গড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা নিয়ে এখনো আদালতে রিট চলমান রয়েছে।

গফুরগাঁও জে এম ফাজিল মাদ্রাসার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান বলেন, করোনার জন্য আমরা এইসএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। অটোপাসে আমাদের রেজাল্ট আশানুরূপ হয় নাই। বছরের পর বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বপ্ন দেখার ইচ্ছা এক মূহুর্তেই ইতি ঘটতে যাচ্ছে। এমনিতেই আমরা এইসএসসিতে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন থেকে পিছিয়ে রয়েছি আবার যদি পরীক্ষা না দিতে পারি অজান্তেই আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।

শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রতি ইউনিটে দেড় লাখ করে তিন ইউনিটে মোট সাড়ে ৪ লাখ পরীক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় বসানো কথা ছিল। কিন্তু প্রাথমিক আবদেন অনেক কম হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম ১০ লাখ আবেদন করবে। কিন্তু সেখানে সাড়ে ৩ লাখের বেশি আবেদন পড়েছে। আবার মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে দেড় লাখেরও কম করে।

তিনি বলেন, অন্যদিকে বিজ্ঞানে দেড় লাখের বেশি হওয়াতে চূড়ান্ত আবেদনের প্রথমে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থীকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আবারও আবেদনের সুযোগ দেবো।


সর্বশেষ সংবাদ