চায়না ক্যালকুলেটরে জালিয়াতির চেষ্টা, ভর্তিচ্ছু আটক

জোবায়ের আহমেদ সিয়াম
জোবায়ের আহমেদ সিয়াম  © টিডিসি ফটো

টেলিগ্রাম ও ১৬ হাজার টাকা মূল্যের চায়না ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে অভিনব পদ্ধতিতে জালিয়াতি করার সময় এক ভর্তিচ্ছুকে আটক করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টরিয়াল বডি।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে চবির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটের ২য় শিফটে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের ৫৩২নং কক্ষ থেকে আটক করা হয় তাকে। এরপরে তাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, অভিযুক্ত জোবায়ের আহমেদ সিয়ামের বাড়ি পাবনা জেলার আমিরপুর থানায়। তিনি পাবনা সরকারি বুলবুল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বেরিয়ে আসা তথ্য অনুযায়ী এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আরও দুইজনকে সনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- অভিযুক্ত সিয়ামের খালাতো ভাই ফুয়াজ খান ফিয়াম ও ফিয়ামের বন্ধু মেহেরান। এরমধ্যে ফিয়াম ঢাকার মোহাম্মদপুর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে এবছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী। এবং মেহেরান পড়ছে ঢাকার নটরডেম কলেজে।

জিজ্ঞাসাবাদে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন ফিয়াম। স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শাবিপ্রবির ‘বি১’ ইউনিটেও জোবায়ের আহমেদ সিয়ামের খালাতো ভাই ফুয়াজ খান ফিয়াম গত ২৬ অক্টোবর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি১’ ইউনিটের (বিজ্ঞান অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। যদিও ঐ পরীক্ষার ফলাফল এখনও প্রকাশ হয়নি। ওই পরীক্ষায় একই প্রযুক্তির মাধ্যমে জালিয়াতি করে এই চক্র। সেদিন এক ঘণ্টার পরীক্ষায় ফিয়ামকে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দেয় সিয়াম।

এদিন পুরো প্রক্রিয়াটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও সিয়ামের মুঠোফোন পরীক্ষা করে বের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি।

যে পদ্ধতিতে জালিয়াতি করা হয়-

সিয়ামের সাথে আসা চট্টগ্রামে চাকরিরত এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগমুহূর্তে দামি একটি স্মার্টফোন নিয়ে হলে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর মোবাইলটির সঙ্গে ক্যাসিও কোম্পানির এফএক্স-৮২ এমএস মডেলের ক্যালকুলেটরের অনলাইন সংযোগ ঘটান। প্রথমে মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে টেলিগ্রামের মাধ্যমে ঢাকায় অবস্থানরত ফুয়াজ খান ফিয়াম ও মেহেরানের কাছে পাঠিয়ে দেন।

এরপর তারা সেখান থেকে অল্প সময়ের মধ্যে সিয়ামের কাছে উত্তর পাঠালে সেটি ক্যালকুলেটরে দেখে উত্তর দিচ্ছিলেন সিয়াম। একপর্যায়ে ক্যালকুলেটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পুনরায় টেলিগ্রামের মাধ্যমে জালিয়াতি করেন তিনি। মোবাইল চেক করে দেখা যায়, টেলিগ্রামে বিকেল ৩টা ৩১ মিনিট থেকে ৪টা ১ মিনিট পর্যন্ত ৮ বার সিয়ামের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছে তার।

পরীক্ষা চলাকালে হাঁটুরভাঁজে মোবাইল রেখে জালিয়াতি করছিলো সিয়াম। একপর্যায়ে তার পেছনের সিটে থাকা একটি মেয়ে সিয়ামকে জালিয়াতি করতে দেখে ফেলে। এর কিছুক্ষণ পর মেয়েটি হল পরিদর্শকদের বিষয়টি জানান। পরে পরিদর্শকরা সত্যতা পেয়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে ব্যাপারটি অবহিত করলে তাকে আটক করা হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এফএক্স-১০০ মডেলের নিচে সব ধরনের ক্যালকুলেটর ব্যবহারে অনুমতি থাকলেও স্বাভাবিকভাবে এই মডেলের ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে জালিয়াতি করা সম্ভব নয় বলে সকলের ধারণা। কিন্তু এফএক্স-৮২ মডেলের ক্যালকুলেটরে কিভাবে জালিয়াতির বিষয়টি সকলের ধারনা পাল্টে দিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম জানান, এটি চায়না থেকে আমদানিকৃত ক্যালকুলেটর। যা বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। এবং এর মূল্য ১৬ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে চবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, এ ধরণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম নেই। আমরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। আইন অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিবে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!