একক ভর্তি পরীক্ষায় যেতে রাজি নয় চবি, তবে...
- শেখ আব্দুল্লাহ ইয়াসিন, চবি
- প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৬ PM , আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১ PM
আসন্ন ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে কাজ করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। সে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কর্তৃক আদেশ জারি করতে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে সেটি যাচাই-বাচাই করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে যেতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের ডিন ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরাসহ সংশ্লিষ্টরা কেউ রাজি নন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি হলে বিষয়টি বিবেচনা করবে বিশ্ববিদ্যালয়টির সংশ্লিষ্টরা।
ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষ আয়োজন করতে ইতিমধ্যে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। গত অক্টোবরের শেষের দিকে ইউজিসির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে ভর্তি প্রক্রিয়া, কমিটি গঠন, কমিটির আকার, আর্থিক বিষয়াবলিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ জানানো হয়েছে। ইউজিসির এসব সুপারিশ বর্তমানে যাচাই-বাছাই করছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে তারা ইউজিসির খসড়া প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছেন। যাচাই-বাছাই শেষে এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে একটি বৈঠক করবে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরপর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সুপারিশগুলো রাষ্ট্রপতি ও দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার্য মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের কার্যালয়ে পাঠানো হবে। পরে সেখান থেকে এ নিয়ে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হবে। তবে কবে নাগাদ তা প্রকাশিত হবে তা জানা যায়নি।
জানা গেছে, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে ১৫ সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এ কমিটির প্রধান ইউজিসি চেয়ারম্যান। কমিটির সদস্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট); বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উপাচার্যরা এই কমিটিতে আছেন।
ইউজিসি একক ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। সে কমিটিতে আমিও রয়েছি। আমি একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমার ডিন, একাডেমিক কাউন্সিলে আলাপ করেছি, এতে কেউ এতে রাজি নন। -চবি উপাচার্য
একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউজিসি একক ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। সে কমিটিতে আমিও রয়েছি। আমি একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমার ডিন, একাডেমিক কাউন্সিলে আলাপ করেছি, এতে যেতে কেউ রাজি নন।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেটা করতে পারি, আগামী বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাইলে বিভাগীয় পরীক্ষার আয়োজন করার পরিকল্পনা করবো। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে। ইউজিসি তো আর স্বায়িত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একক ভর্তি পরীক্ষায় আনতে পারে না। আর যদি মহামান্য অধ্যাদেশ জারি করেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী আমরা একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভাববো।
বর্তমানে দেশে ৫৩টি পাবলিক ও ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ভর্তি করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়।
তবে ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে; তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে এবং কৃষি ও কৃষিশিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অপর একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
একক ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, এনটিএ গঠন করতে আমাদের তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যাবে। সেজন্য আমরা একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ভাবছি। একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সবাই একমত হলেও বড় বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্নমত রয়েছে। সেজন্য আমরা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করানোর চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এ পরীক্ষা পদ্ধতি যাবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আইন মেনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে ঢাবি। রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে সেটাও আইনে পরিণত হবে। ভিন্ন মত বা চিন্তা থাকলেও সেটা মেনে চলতে আমরা বাধ্য। তখন আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন পরীক্ষার মানটা ভালো হয়, যাচাই প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হয়।
ইউজিসি সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে সেটি আইন আকারে জারি হবে। তবে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়; সকল বিশ্ববিদ্যালয় একক ভর্তি পরীক্ষায় আসতে বাধ্য হবে।