স্বপ্ন বিসিএস ছিল না, সম্মান রক্ষায় ক্যাডার হচ্ছেন তরুণরা!

  © টিডিসি ফটো

রহমান সাহেবের বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো আজকে। আসছে ঈদের তিন দিন পর বিয়ে। ছেলে বিসিএস ক্যাডার। তবে রহমান সাহেবের ষোলকলা পুরণ হয়নি। প্রথম দিকে ২/৩ টা পাওয়ারফুল সেক্টরের ক্যাডার খুজেছিলেন। বোনটার পড়াশোনা তেমন ভাল না থাকায় পাওয়া যায়নি শেষ পর্যন্ত।

তবুও রহমান সাহেব একটু হাফ ছেড়ে বাচলেন। বোনটাকে নিয়ে টেনশনটা একটু কমলো। অনেক দিন যাবত বোনের পাত্র খুজছিলেন। এই বাজারে ছেলের অভাব নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত ভালো একটা ছেলে পাওয়া, বাজারে ভেজালমুক্ত পণ্য পাওয়ার মতই দুস্কর।

ওহ, রহমান সাহেবের পরিচয়ই তো দেয়া হয়নি। রহমান সাহেব সাংবাদিকতায় পড়াশোনা না করলেও, খুব ভালো লিখতে পারেন। অনলাইন জার্নাল এবং নিউজ পেপারে নিয়মিত লেখালেখি করেন। গতবছর একটা কোম্পানি থেকে বর্ষসেরা লেখার পুরষ্কারও পেয়েছেন।

আপনারা সবাই পড়েছেন লেখাটা, ফেসবুকে রীতিমত ভাইরাল হয়েছিল লেখাটা; শেয়ার, লাইক, কমেন্টে রহমান সাহেবের ফেসবুক নোটিফিকেশন লাল বাত্তি জ্বলে উঠেছিল। ওই যে, ‘বিসিএস মুখী তরুণ ও ভঙ্গুর জাতীয় উন্নয়ন।’

বিসিএস ক্রেইজকে ইচ্ছেমতো ধুইয়ে দিয়েছিলেন, আর বিসিএস মোটিভেটরদের নিয়ে যা লিখলেন, মোটিভেটরদের জামাকাপড় নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছিলো। (উপরের গল্পের সাথে কারো মিল খুঁজে পাওয়া গেলে তা কাকতালীয়)।

বর্তমানে বিসিএস ক্রেইজের সমানুপাতে বাড়ছে বিসিএস বিরোধীদের সংখ্যা। নিউজ পেপারে ‘বিসিএসই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়’, ‘বিসিএস পেলেই জীবন সফল, না পেলেই বৃথা?’ টাইপের লেখা হরহামেশাই চোখে পড়ছে। বোদ্ধারা তরুণদের বিসিএসমুখীতার সমালোচনা করছেন, এক শ্রেণির ক্যাডার বা বিসিএস মোটিবেশনাল স্পীকারদের ইচ্ছে মতো ধুইয়ে দিচ্ছেন। তবুও কমছে না তরুণদের বিসিএস প্রীতি (৪০ তম বিসিএস এ ১৯০৩ পদের বিপরীতে ৪১২০০০ প্রার্থী : প্রথম আলো)।

ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেদের হাতে বিসিএস গাইড, পাবলিক লাইব্রেরীতে গবেষকদের পাওয়া যায়না, সেখানে আজ বিসিএস ক্যান্ডিডেটদের উপচে পড়া ভীড় (খবরে প্রকাশঃ বিসিএস পরীক্ষার দিন/পরের দিন পাবলিক লাইব্রেরী ফাঁকা)। বিভিন্ন পেশাজীবীদের (ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/আইনজীবী) নিজ সেক্টরের বাইরে বিসিএসের আকর্ষণীয় জেনারেল ক্যাডারগুলোতে চাকরি নেওয়ার প্রবণতাও আশংকাজনকভাবে বাড়ছে।

কিন্তু যতদিন পর্যন্ত অন্যান্য সেক্টরকে বিসিএসের চেয়ে আকর্ষণীয় না করা হবে, যতদিন পর্যন্ত রহমান সাহেব তার বোন এর জন্য বিসিএস পাত্র খুজবেন- ততদিন কারফিউ জারি করেও তরুণদের বিসিএসের বলয় থেকে রক্ষা করা যাবে কী?

কেইস স্টাডি-১: মিস্টার এক্স জিলা স্কুলের প্রথম সারির ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও সায়েন্স না নিয়ে কমার্স নিয়েছিল, সার্টিফাইড চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট হবেন, দেশের বিজনেস সেক্টর সমৃদ্ধ করবেন বলে। দেশসেরা পাবিলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ কমপ্লিট করে দেখলো, প্রাইভেট সেক্টরে একটা সময় পরে টাকা পাওয়া গেলেও সম্মানটা সরকারি চাকরি এবং বিসিএসেই বেশি। মিস্টার এক্স তার ৯ বছরের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে আজ বিসিএস ক্যাডার।

আরো পড়ুন: ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি আগস্টে, শূণ্য পদ ২ হাজার ১৩৫

কেইস স্টাডি-২: মিস্টার ওয়াই নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করেছে। পড়াশোনা শেষ করে অন্যদের মতো সরকারি চাকরি না খুঁজে ১৫ হাজার টাকা বেতনে টেক্সটাইল সেক্টরে ঢুকেছে। দুই বছর চাকরিকালে তার বন্ধুরা বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বন্ধুদের সামাজিক সম্মান দেখে দেখে ক্লান্ত ওয়াই তার দুই বছরের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এখন বিসিএস এর জন্য পড়াশোনা করছে।

আরো পড়ুন: টিউশনির সম্মানী পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় হাজারো শিক্ষার্থী

কেইস স্টাডি-৩: মিস্টার জেড দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক ইঞ্জানিয়ারিং এ পড়ে রিসার্চের পাশাপাশি বিসিএসের জন্য একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছে। প্রেয়সীর বাবা স্ট্রেট প্রেয়সীকে বলে দিয়েছেন, নিজের পছন্দমতো বিয়ে করবে ভাল কথা, ছেলেকে কিন্তু ক্যাডার হতে হবে।

দ্রষ্টব্যঃ তিনটি কেইস স্টাডিই লেখকের বাস্তব জীবন অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

লেখক: রবিউল আলম লুইপা
৩৫ তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)

আরো পড়ুন: সামনের মাসেই ৪০তম প্রিলি ও ৩৮তম লিখিত ফল


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence