লাইব্রেরি কিংবা বন্ধু মহলে নয়, একা একা পড়তেন আরিফ

মো. আরিফুল ইসলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী।  সদ্য গেজেট হওয়া ৩৭তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন তিনি। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র হয়ে তার বিসিএস হওয়ার গল্প লিখেছেন- এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

বরিশালের জেলার গৌরনদী উপজেলার মাতুলালয়ে জন্ম মো. আরিফুল ইসলামের। বাবা মো. আবু হানিফ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত। মা হেনোয়ারা বেগম গৃহিণী। আরিফুলের শৈশব কেটেছে রাজশাহীর পদ্মার পাড়ে। বাবার চাকরির সুবাদে এই শহরেই তার পড়ালেখায় হাতেখড়ি। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি-তে জিপিএ ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ভর্তি হন ‘রাজশাহী সিটি কলেজে’। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল জিপিএ ৪.৬০ আশানুরূপ করতে না পেরে অনেক কেঁদেছিলেন আরিফুল। তবে তাতে তো আর জীবন থেমে থাকে না। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল দেয়ার আগে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন, কিন্তু গণিতে গ্রেড কম আসায় একটি বাদে বাকি সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা হারান আরিফুল। কিন্তু তাতে থেমে যাননি।

ওয়েটিং থেকে দুটো বিভাগের মধ্য থেকে ভর্তি হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগে। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আরিফুল, কিন্তু পরের বারও চান্স হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ইয়ার-ড্রপ খেতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়ালেখার পাশাপাশি প্রচুর ভ্রমণ করতেন তিনি। সাহিত্যের প্রতি ছিল বিশেষ ঝোঁক। শরৎচন্দ্র, সমরেশ, হুমায়ূন ও জাফর ইকবালের বইগুলো তার প্রিয় পাঠ্য। শার্লক হোমস ও তিন গোয়েন্দাও গিলতে পারেন গোগ্রাসে। চতুর্থ বর্ষে উঠে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন।

প্রস্তুতি যেভাবে নেয়া হয়েছিল
বন্ধুরা সবাই বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে গিয়ে বিসিএস-এর প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলো। কিন্তু আরিফের শুরুটা হলো রবীন্দ্রসঙ্গীত-এর মত ‘একলা চলো রে’ নীতিতে। বিসিএস প্রস্তুতির অলিগলি চেনা শুরু করলেন। দিনরাত বাসায় বসে পড়াশোনা করতেন। সময় নিয়ে নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিল। এছাড়া আরিফের গাইড বইয়ের বাহিরেও অন্তর্জালের দুনিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গুগল ও পত্রিকার বিভিন্ন লিংকে ঢুঁ মেরে কিছু জানার আগ্রহ ছিল সব সময়; যা বিসিএস পরীক্ষায় সাহায্য করেছিল। ৩৫তম বিসিএস'র নন-ক্যাডারে ১ম শ্রেণীর সরকারি চাকরির জন্য জীবনে প্রথম সুপারিশপ্রাপ্ত হন। যোগদান করেন পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে। ‘পরিসংখ্যান কর্মকর্তা’ পদে। ইতোমধ্যেই পূবালী ব্যাংকে অফিসার পদেও চাকরি পেয়ে যান আরিফুল। কিন্তু ‘পরিসংখ্যান কর্মকর্তা’ পদে যোগদান করায় পূবালী ব্যাংকে আর যোগ দেওয়া হয়নি তার।

৪০তম বিসিএস প্রিলির জন্য পরামর্শ 
আরিফুল ইসলামের পরামর্শ হলো- জ্ঞানের গভীরতা বাড়াতে হবে। বাজারে প্রচলিত গাইড বইয়ের পাশাপাশি নিয়মিত দেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন লেখকের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। মাথায় যখনি কোনো নতুন প্রশ্ন, শব্দ বা দ্বিধা আসবে; সাথে সাথে তা গুগল করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গুগল হচ্ছে সর্বোত্তম শিক্ষক। নিয়মিত কমপক্ষে একটি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। সেই সাথে অনলাইন পোর্টালগুলোয় নতুন কিছু পেলেই তা ঘাটাঘাটি করার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো। বিভিন্ন ফোরামে বা বন্ধু মহলে কথা বলার অভ্যাস করা উচিত। সেই সাথে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে লেখালেখির মাধ্যমে লেখার হাত চালু রাখতে হবে। সর্বোপরি একটা নিয়মাফিক জীবনযাপন করা উচিত। মানুষ হিসেবে নিজের জ্ঞানের গভীরতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পড়াশোনা করলেই সফলতা আসবে। (পুনঃপ্রকাশিত)

আরো খবর:কাঁধে হাত রেখে বাবা বলেছিলেন, এএসপি তোকে হতেই হবে


সর্বশেষ সংবাদ