আল জাজিরার বিশ্লেষণ

কাশ্মীর হামলা: ভারত কীভাবে পাকিস্তানে আঘাত হানতে পারে – ইতিহাস কী বলে

  © আল জাজিরা

পাকিস্তান গত বুধবার জানিয়েছে, তাদের কাছে “বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্য” রয়েছে যে, ভারত আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাদের ওপর সামরিক হামলা চালাতে পারে।

অন্যদিকে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত মঙ্গলবার ও বুধবার একাধিক নিরাপত্তা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে পহেলগাম হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে– এই সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়। এর আগে ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়।

এই হামলার পর থেকে পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্ক আরও খারাপ হয়ে গেছে। তারা কূটনৈতিক যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে, এমনকি একে অপরের নাগরিকদের দেশে রাখতেও অনিচ্ছুক।

উপমহাদেশে এখন টান টান উত্তেজনা। কিন্তু ভারত কী সত্যিই সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাতে যাচ্ছে? আর সেটি কেমন হতে পারে? ইতিহাস কী বলে, তা দেখে নেওয়া যাক।

কী ঘটেছে?
পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বুধবার সকালে এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ইসলামাবাদের কাছে “বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্য” রয়েছে যে ভারত “পরবর্তী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে” পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালাতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই হামলার পেছনে ভারত “মিথ্যা ও সাজানো” অভিযোগকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে– যেমন পহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ। ভারত এই হামলায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করলেও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরের একটি অংশ শাসন করে, তবে দু’দেশই পুরো অঞ্চলটিকে নিজেদের দাবি করে।

তারারের এই বক্তব্য এসেছে একদিন পর, যখন মোদী এক গোপন বৈঠকে ভারতের সেনাবাহিনীকে “সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” দেন, যাতে তারা পহেলগাম হামলার জবাব দিতে পারে। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা এ খবর দিয়েছে, সূত্র হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে অনামিকা সরকারি কর্মকর্তাদের।

বুধবারও মোদী একটি “ক্যাবিনেট সিকিউরিটি কমিটি” বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন– যা ছিল হামলার পর দ্বিতীয় এমন বৈঠক।

এদিকে, ভারত ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরকে ভাগ করা নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC)-তে গুলি বিনিময় চলছে। এর মধ্যেই বিভিন্ন বিশ্বনেতা পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং বলছি... পরিস্থিতিকে যেন আরও খারাপ না করে।” মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন। 

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস-এর মুখপাত্রও জানিয়েছেন, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং “উত্তেজনা প্রশমনের” জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।

ভারত কী ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে?
যদিও ভারত কী করবে তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন, অতীতে তারা বিভিন্ন ধরনের কৌশল নিয়েছে:

গোপন সামরিক অভিযান
এই ধরনের হামলা গোপন থাকে– ঘোষণা করা হয় না, স্বীকারও করা হয় না। ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে এমন বহু অভিযান চালিয়েছে, যাতে সামরিক পোস্ট লক্ষ্য করে হামলা হয়, সৈন্য নিহত হয়, কখনো কখনো শত্রুপক্ষের সৈন্যের শিরশ্ছেদ পর্যন্ত হয়েছে।

এসব হামলা সাধারণত প্রতিশোধমূলক– সেনাদের ওপর আগের কোনো হামলার জবাবে। এর লক্ষ্য অন্য দেশকে বার্তা দেওয়া, কিন্তু উন্মুক্ত প্রতিক্রিয়ার সুযোগ না রাখা, যাতে যুদ্ধ না ছড়ায়। যদি প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়, তাহলে রাজনৈতিক চাপ বাড়ে পাল্টা আঘাত হানার।

প্রকাশ্য ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’
কখনো বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকে প্রকাশ্যভাবে– যেমন ২০১৬ সালে।

তখন, উরিতে ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হওয়ার পর, ভারতের বিশেষ বাহিনী সীমান্ত রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে “লঞ্চ প্যাড”-এ হামলা চালায়। ভারত বলেছিল, এসব জঙ্গি ভারতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

ভারত দাবি করেছিল, এই হামলায় ডজনখানেক জঙ্গি নিহত হয়, যদিও বিশ্লেষকেরা মনে করেন প্রকৃত সংখ্যাটি হয়ত কম ছিল।

আকাশপথে হামলা
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক সেনা নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মুহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে।

জনরোষের মুখে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে হামলা চালায়– দাবি করে “জঙ্গি ঘাঁটি” লক্ষ্য করে। পাকিস্তান বলেছিল, বিমান হামলায় বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কেউ নিহত হয়নি। তারা ভারতীয় বিমানকে তাড়া করেছিল বলেও দাবি করে।

পরদিন দুই দেশের যুদ্ধবিমান মুখোমুখি হয়। পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে, পাইলটকে আটক করে। পরে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর দখলের প্রচেষ্টা

গত কয়েক বছরে ভারতে ক্রমেই জোরালো দাবি উঠেছে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর ফেরত নেওয়ার পক্ষে। পহেলগাম হামলার পর এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

যদিও এটি ভারত সরকারের নীতিগত লক্ষ্য। তবে উভয় দেশের সেনাশক্তি কাছাকাছি হওয়ায় এই ধরনের অভিযান বাস্তবসম্মত নয়।

তবে ইতিহাসে ভারত এ ধরনের সাফল্য পেয়েছে। ১৯৮৪ সালে, ‘অপারেশন মেঘদূত’-এর মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী সিয়াচেন হিমবাহ দখল করে নেয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু যুদ্ধক্ষেত্র।

নৌবাহিনী মিশন
পহেলগাম হামলার পরে ভারতীয় নৌবাহিনী ঘোষণা দেয়, তারা সফলভাবে দূরপাল্লার অ্যান্টি-শিপ মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছে।

তারা জানায়, “নৌবাহিনী সর্বদা যুদ্ধ প্রস্তুত, নির্ভরযোগ্য এবং দেশের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত।” অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এটি শক্তি প্রদর্শনের একটি অংশ।

পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর ৪টি যুদ্ধ করেছে, যার তিনটি কাশ্মীর নিয়ে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানি মিলিশিয়া কাশ্মীরে আক্রমণ করে। তখন রাজা হরি সিং ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার শর্তে সেনা সহায়তা চান। ১৯৬৫ সালে সীমান্ত সংঘর্ষ আরেক যুদ্ধ রূপ নেয়। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ– পাকিস্তানি সেনারা সীমান্ত পার হলে, ভারত তাদের সরিয়ে দেয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence