‘সন্ত্রাসী’ ট্যাগ, বুলিং আর হুমকি—হার্ভার্ডে মুসলিম ও ইহুদি শিক্ষার্থীদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা

হার্ভার্ডে ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলনরত মানুষ
হার্ভার্ডে ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলনরত মানুষ  © সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে মুসলিম ও ইহুদি শিক্ষার্থীরা বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হাভার্ডের টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন বাস্তবতা।

২০২৩ সালে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ক্যাম্পাসজুড়ে যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছিল, তখন বিভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। হার্ভার্ডের নিজস্ব উদ্যোগে গঠিত দুটি টাস্কফোর্স এক বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একটিতে মুসলিম, আরব ও ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে; অন্যটিতে ইহুদি ও ইসরায়েলি শিক্ষার্থীদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এক যৌথ জরিপে অংশ নেওয়া ২,২৯৫ জনের মধ্যে ৪৭ শতাংশ মুসলিম ও ১৫ শতাংশ ইহুদি শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে তাঁরা শারীরিকভাবে নিরাপদ না। এছাড়া ৯২ শতাংশ মুসলিম এবং ৬১ শতাংশ ইহুদি শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করায় তাঁরা একাডেমিক ও পেশাগত প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছেন।

মুসলিম শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, কেবল কেফিয়াহ পরে ক্লাসে যাওয়ার কারণে তাঁদের ‘সন্ত্রাসী’ বা ‘ইহুদি-বিরোধী’ বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করায় অনেকে বুলিং, যৌন হয়রানি এবং প্রাতিষ্ঠানিক উপেক্ষার শিকার হয়েছেন।
অন্যদিকে, ইহুদি শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতাও কম উদ্বেগজনক নয়। 

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের শেষ দিকে ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ বাড়তে থাকলে অনেক ইহুদি ও ইসরায়েলি শিক্ষার্থী নিজেদেরকে লক্ষ্যবস্তু মনে করতে শুরু করেন। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের কারণে অনেকেই বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেছেন, “আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সভ্য ও মুক্ত সংলাপ গড়ে তুলতে চাই। ভিন্নমতের সহাবস্থানই শিক্ষার মূল ভিত্তি।” 

তিনি আরও বলেন, টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুযায়ী ভর্তি, পাঠ্যক্রম, প্রশিক্ষণ এবং শৃঙ্খলাবিষয়ক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে হার্ভার্ডের এ উদ্যোগকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে টাস্কফোর্স দুটি বিশেষভাবে সতর্ক থেকেছে। তারা বলেছে, এই সংস্কারগুলো বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই হওয়া উচিত।

মুসলিম অধিকার সংগঠন ‘কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস’-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “হার্ভার্ড যদি প্রকৃত অর্থে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় সহনশীলতা নিশ্চিত করতে চায়, তবে এ প্রতিবেদন বাস্তবায়ন তার প্রথম ধাপ হতে পারে।”

ইহুদি সংগঠন ‘সাইমন উইসেনথাল সেন্টার’-এর এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, “হার্ভার্ডে ইহুদি শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ইতিহাসের এক দুঃখজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইহুদি-বিরোধিতা এবং মুসলিম-ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের হেনস্তার বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে তদন্ত কমিটি গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence