ফেনীতে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্কহীন বন্যাদুর্গত এলাকা, চরম দুর্ভোগে বানভাসিরা
- ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৭ AM , আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৪০ PM
ফেনীতে টানা বর্ষণ ও ভারতীয় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অন্তত ২০টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সীমান্তঘেঁষা বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। দুই উপজেলার কিছু এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি, মিটার ও ট্রান্সফরমার বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কায় প্রায় ৩১ হাজার ২০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়ন, ফুলগাজী সদরের কিসমত ঘনিয়ামোড়া, উত্তর শ্রীপুর, পূর্ব ঘনিয়ামোড়া, উত্তর নিলক্ষ্মী, পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া, দেড়পাড়া, নিলক্ষ্মী, গোসাইপুর, মন্তলা, গাবতলা, কহুমা, জগতপুর এবং পরশুরাম উপজেলার ধনীকুন্ডা, শালধর, বেড়াবাড়িয়াসহ বেশকিছু এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। এতে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে মানুষজন।
ফুলগাজী জগতপুর এলাকার গৃহবধূ সালমা আক্তার বলেন, বন্যার পানিতে আমাদের বাড়ির চারপাশ ঘিরে আছে। কারো সঙ্গে কথা বলার উপায় নেই। মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকায় সন্তানদের খবর নিতে পারছি না। ভয় হয়, কোনো বিপদ হলে কীভাবে জানাবো।
আরও পড়ুন: ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে আজ
একই উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকার রবিউল আলম বলেন, আমার দুই সন্তান বিদেশে থাকে। বন্যার খবর শুনে ওরা বারবার ফোন করছে, কিন্তু ফোন যায় না। এই টাওয়ারগুলো যদি সচল রাখা যেত, তাহলে অন্তত খোঁজখবর জানানো যেত।
আমজাদহাটের আইয়ুব আলী নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, গত বছরের বন্যায়ও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। তারা জেনারেটরের মাধ্যমে মোবাইল টাওয়ারগুলো সচল রাখলে মানুষ খুবই উপকৃত হতো। বিশেষ করে প্রবাসীরা বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
পরশুরাম উপজেলার ইয়াসিন আরাফাত রিফাত বলেন,গতকাল সকাল থেকে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। টানা বৃষ্টির সঙ্গে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। রাতে ঘর অন্ধকার, চারপাশে পানি, আবার মশার উৎপাত সব মিলিয়ে অসহনীয় অবস্থা। মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না, নেটওয়ার্কও ঠিকমতো কাজ করছে না। কেউ কারও খবর নিতে পারছে না। পানি যেমন ঘর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, তেমনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাও তৈরি করেছে আরও এক ভয়াবহতা।
ফুলগাজী উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উপজেলার প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকায় সতর্কতামূলকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের অধীনে মোট গ্রাহক সংখ্যা ৩৮ হাজার, তাদের একটি বড় অংশই সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার মধ্যে রয়েছে।
পরশুরাম পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সোহেল আকতার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, উপজেলার মোট ৩৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৬০ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। ভারী বর্ষণ ও বন্যার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্ত লাইনগুলো মেরামতের পরই ধাপে ধাপে সংযোগ দেওয়া হবে।