নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান © টিডিসি
বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘সরকারি হিসেবেই আমাদের দেশের শতকরা ২৬ জন লোক নাম স্বাক্ষর করতে পারে না। যদিও স্বাক্ষরতা আর শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য আছে। কিন্তু কই? এ দেশের প্রাইমারি শিক্ষা ও সেকেন্ডারি শিক্ষার তো বিস্তার হয়নি। আমাদের দেশে এখনো তো মৌলিক শিক্ষা মানে নিরক্ষরতা দূর হয়নি, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য লড়াই করি। অনেকের রক্তের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হয়।’
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে ২০২৪-২৫ বর্ষের তিন অনুষদের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে যে নাম দেখলাম আগে বাংলায়, পরে আরবিতে ও শেষে ইংরেজিতে। ভাষা ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদারতা সারা দেশের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত। পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে সবত্র লেখার ক্ষেত্রে কোন ভাষায় আগে লিখবেন, তা আপনার চরিত্র নির্ধারণ করে। বাংলা ভাষার যে দুর্দশা চলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য হিসেবে আমরা এ দায় এড়াতে পারি না। দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইংরেজিতে লেখা। বাংলাকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নামে যে দৈন্যতা তৈরি হয়েছে, তা আমাদের বোঝা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমি বাংলায় কথা বলছি। আমি তো জানি, আমি বাংলা ভাষাকে নতুন করে প্রাণ দেওয়ার জন্য কিছু বলছি না। পৃথিবীর সব দেশের ভাষায় শিক্ষা এবং জ্ঞান বিস্তারের মাধ্যম হয়ে গেলে সব মানুষের শিক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের দেশে যে এখনো শত শত মানুষ শিক্ষিত হতে পারেনি, তাদের জ্ঞানের আলো আমরা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারিনি লিখিত রূপে, সেটার কারণ হচ্ছে আমাদের অর্থ জ্ঞানের অভাব, আমাদের বিদ্যা শিক্ষার জন্য বইপত্রের অভাব।’
অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন লেখক, গবেষক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের প্রফেসর ড. সলিমুল্লাহ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, জুলাই শহিদদের স্মরণে নিরবতা পালন, সর্বোচ্চ নম্বরধারীদের পুরস্কার প্রদান, নবীনদের ফুল বরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।