৩১ বছর ধরে বন্ধ নির্বাচন, চাকসু এখন ‘বিয়ের ক্লাব’

চাকসু ভবন
চাকসু ভবন  © টিডিসি ফটো

প্রায় ৩১ বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু)। ছাত্র সংগঠনগুলো বারবার দাবি করলেও প্রশাসনের গড়িমসির কারণেই বন্ধ রয়েছে চাকসুর কার্যক্রম। তবে চাকসুর কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এর ভবন বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দিয়ে টাকা আয় করছে প্রশাসন।  

১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চাকসু। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মোট ছয়টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর ছাত্রনেতা ফারুকুজ্জামান নিহত হওয়ার পর চাকসু বন্ধ ঘোষণা বরে চবি প্রশাসন। এরপর থেকে আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

আরও পড়ুন- চাকসু নির্বাচনও হবে, তবে...

চবিতে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি শেষ হওয়ার এক যুগ হতে চললো। ছাত্রলীগের পূর্ণনিয়ন্ত্রণে রয়েছে ক্যাম্পাস। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে হচ্ছে প্রগতিশীলতার চর্চা। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ফতেহপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন, ডিন নির্বাচন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নির্বাচন প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হলেও উপেক্ষিত হয়ে আসছে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের ছাত্রসংসদ চাকসু নির্বাচন। ছাত্রছাত্রীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার মঞ্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের গুরুত্ব অস্বীকার করা হচ্ছে নানান অজুহাত দেখিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মুখে তালা লাগিয়ে রেখেছে ৩১ বছর ধরে।

তবে শিক্ষার্থীদের অধিকার উপেক্ষিত থাকলেও বন্ধ নেই চাকসু। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় চাকসু ভবনের চারপাশে আলোকসজ্জা করে মহাধুমধামে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয় টাকার বিনিময়ে।

আরও পড়ুন- চাকসু নির্বাচনের পক্ষে গণস্বাক্ষর গ্রহণ চবি ছাত্রলীগের

চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হল, শাহ আমানত হল, সোহরাওয়ার্দী হলসহ প্রায় সবকটি হলের ছাত্রসংসদও অকার্যকর। ছাত্রসংসদগুলোর কক্ষগুলো এখন ছাত্রলীগের দলীয় কার্যালয় হিসেবেই ব্যবহার হয়ে আসছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে চাকসু নিয়ে রয়েছে অনেক আকুতি। রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ রফিকউজ্জামান বলেন, বিগত দু'দশকের বেশি সময় ধরে চাকসু-র সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি যতদ্রুত সম্ভব চাকসু নির্বাচন হোক। চাকসু নির্বাচন না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ন্যায্য দাবি-দাওয়া, সমস্যা নিয়ে কথা বলার মতো ছাত্র প্রতিনিধিও তৈরি হচ্ছে না।

ছাত্র ইউনিয়নের চবি শাখার সভাপতি গৌরচাঁদ ঠাকুর বলেন, চাকসু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের নিয়মতান্ত্রিক মাধ্যম। যেখানে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে। কিন্তু প্রশাসন চাকসু নির্বাচন নিয়ে মোটেই আন্তরিক নয় বরং ছাত্র প্রতিনিধিদের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে বিষয়টি উপেক্ষা করে যায়। মূলত বর্তমান প্রশাসন চায় না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে শিক্ষার্থীদের কথা বলার সুযোগ দিতে।

আরও পড়ুন- চাকসু নির্বাচনের দাবিতে ছাত্র ইউনিয়ন’র মানববন্ধন

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে চাকসু নির্বাচনকে অপরিহার্য বলে মনে করেন।

চাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের দৃশ্যমান চেষ্টা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে প্রশাসনের কাছে চাকসু নির্বাচনের দাবি জানাবো। চাকসু নির্বাচনকে ছাত্রলীগের প্রাণের দাবি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ৩ দশকের অধিক সময় ধরে প্রশাসন এ দাবি উপেক্ষা করে আসছে। রুবেল বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল চিন্তা ও চর্চা শুরু হয়েছে তাই চাকসু নির্বাচন এখন সময়ের দাবি।

চাকসু নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক এবং প্রয়োজনীয় মনে করেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে। তিনি বলেন, বর্তমানে সেশনজট না কমিয়ে আমরা চাকসু নির্বাচনে যেতে পারছি না। সেশনজট রেখে চাকসু নির্বাচন করার পর শিক্ষার্থীরা মারামারি করুক এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে পড়ুক এটা আমরা চাই না। তবে আমরা এটা নিয়ে শিক্ষক সমিটির সাথে বসবো।

চাকসু নির্বাচন নিয়ে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেন, করোনায় দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ ছিলো। এখন স্বাভাবিক হচ্ছে। সবগুলো বিভাগে পরীক্ষা যথারীতি চলছে। আমরা বিভিন্ন সৃজনশীল প্রোগ্রাম আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মানসিকতা তৈরিতে চেষ্টা করছি। চাকসু নির্বাচন দ্রুত সময়ে আয়োজন সম্ভব না, এর জন্য বেশ কিছু কাজ করতে হবে। সেদিকে নজর দিচ্ছি আমরা। শিক্ষক সমিতি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সংগঠনের নির্বাচন নিয়মিতভাবে হচ্ছে। সুতরাং চাকসু নির্বাচনও আমরা সুন্দর পরিবেশে আয়োজন করতে পারবো।


সর্বশেষ সংবাদ