ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জিয়া হলের গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ

জিয়া হল ও ঢাবি লোগো
জিয়া হল ও ঢাবি লোগো  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের গেস্টরুমে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের দ্বারা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েকদিন ধরে নিয়মিত এ ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযুক্তরা হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল সুবাইলের ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ম্যানার শেখানোর নামে রাতে নিয়মিত গেস্টরুম বসায় দ্বিতীয় বর্ষের সিনিয়রা। এ সময় সিনিয়রদের সালাম না দেওয়া, হ্যান্ডশেক না করা, রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যেতে সামান্য দেরি হওয়ার কারণে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, সপ্তাহের শনিবার সোমবার এবং বুধবার তাদের ইনফরমাল গেস্টরুম।অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরাই মূলত তাদের গায়ে হাত তুলে। সাত এই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জহুরুলই সবেচয়ে বেশি উগ্র বলে জানান এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস বিভাগের আনিসুর, দর্শন বিভাগের নাফি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শামিম, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রাইসুল, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের সজীব, ফারসি বিভাগের জহিরুল এবং সোস্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগের শাকিল। তারা সবাই হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল সুবাইলের অনুসারী বলে পরিচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাস খোলার পর থেকে হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল সুবাইলের গ্রুপের বড় ভাইয়েরা নিয়মিত গেস্টরুম করায়। সেখানে তারা বড় ভাইদের সালাম না দেওয়া, হ্যান্ডশেক না করা, প্রোগ্রামে যেতে সামান্য দেরি হওয়া কারণে মারধর করে। সপ্তাহে তিন চারদিন গেস্টরুমে নেয়। প্রতিবারই তারা কাউকে না কাউকে মারধর করে। এছাড়া পিতামাতার নাম নিয়ে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজও করেন।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গত শুক্রবার আমি হল গেইটে দাঁড়ানো ছিলাম। পাশ দিয়ে তৃতীয় বর্ষের এক বড় ভাই চলে গিয়েছিলো আমি খেয়াল করিনি। পরদিন ইনফরমাল গেস্টরুমে আমাকে জহুরুল ভাই থাপ্পড় দেয়। আমি তাঁত চেপে সহ্য করতে পারছি। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু এটি সহ্য করতে পারে না।

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদেরকে গেস্টরুমে ১৪টা নিয়ম শেখানো হয়। প্রতিদিন এগুলো মুখস্থ বলতে হয়। কিন্তু আমি না পারায় আমাকে থাপ্পড় দিয়েছে আনিসুল ভাই। এছাড়া আমি গেস্টরুমে টিশার্ট পরে আসছি এটাও নাকি আমার অপরাধ ছিলো।

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমার এক বন্ধুকে রাজু ভাষ্কর্য কোথায় জিজ্ঞেস করেছিলো দ্বিতীয় বর্ষের বড় ভাইয়েরা। তখন তার মাথায় বিষয়টি মনে আসছিলো না। তাই সে বলতে পারেনি।৷ এরপর তাকে এই জহুরুল ভাইই এমন জোরে থাপ্পড় দিয়েছিলো আমার সে বন্ধু কান্না করে দিয়েছে। তার হাঁফানি রোগও ছিলো। থাপ্পড় খেয়ে সে হাঁফাচ্ছে। পরে তাকে গেস্টরুম থেকে ছুটি দিয়ে দেয়।

তবে, এমন ঘটনা আর হবে না বলে জানিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল সুবাইল। তিনি বলেন, ওদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমি ওদের সাথে বসেছি। গায়ে হাত দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। এমনি একটু উচ্চস্বরে কথা হয়েছে। আর এ রকম হবে না।

বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান জয়ের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও কলটি রিসিভ হয়নি।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাহ হোসেন বলেন, আমি অফিসিয়ালি এ বিষয়ে এখনো কিছু শুনিনি। এ বিষয়ে কেউ এখনো কোনো অভিযোগ করেনি। তবে, আমি শুনে যখন যাচাই করতে গিয়েছি তারা বলেছে কোনো মারধর হয়নি। সিনিয়ররা তাদের হয়তো রাগারাগি বা বকবকি করেছে


সর্বশেষ সংবাদ