স্মার্টফোন ক্রয়ের টাকা এখনও পায়নি জাবি শিক্ষার্থীরা

  © ফাইল ফটো

সময়সীমা অতিক্রান্ত হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন ক্রয়ের জন্য পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক ঘোষিত সফট লোন। এতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে সফটলোনের উদ্দেশ্য। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দাবি কার্যদিবস মাত্র তিনদিন হওয়ায় বিলম্বিত হচ্ছে ঋণ প্রদানের কাজ।

অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শ্রেণী-কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য সুদবিহীন এ লোনের ঘোষণা দেয় ইউজিসি। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর, মহামারি পরিস্থিতিতে মেধাবী অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন যাতে ব্যহত না হয় সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মেধাবী অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ডিভাইস ক্রয়ের জন্য তালিকা প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করেন।

নির্দেশনা অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ২৯ ডিসেম্বর আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে ঋণের জন্য আবেদন করেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটলোন অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব মাহফুজ মিয়া স্বাক্ষরিত ঐ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, করোনা মহামারীর (কোভিড-১৯) এর উদ্ভুত পরিস্থিতির কারনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুদবিহীন ঋণের আওতায় ক্রয়ের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীদের (সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা) প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ৩ জানুয়ারি হতে ১০ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত লিংকে গিয়ে আবেদন করতে হবে।’

আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি উপর্যুক্ত লিংকে আপলোড করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘লোন অনুমোদিত হলে ১০ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্মার্টফোন ক্রয়ের রশিদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জমা দিতে হবে।’

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত সফট লোন অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়েই চলেছে। ফলত এ সুবিধা হতে এখনো বঞ্চিত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। 

এ ব্যাপারে সফটলোন অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কম্পট্রোলার মাহফুজ মিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ অনেকখানি গুছিয়ে নিয়েছি। এখন শুধু উপাচার্যের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ফাইলটি আমার হাতে আসলেই আমরা শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে পারবো।’  

এতোদিন দেরি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম মাত্র তিন কর্মদিবস। এতে করে ফাইলের গতি কমে যায়। ফলে আমাদের কাজ শেষ করতে দেরি হয়েছে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ৭০০ এর মতো শিক্ষার্থীর আবেদন পেয়েছি। এর বিপরীতে ইউজিসি মাত্র ২৫৭ জনের ঋণ আবেদন অনুমোদন করে। তাই এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’

শিক্ষার্থীদের লোন পেতে আর কতোদিন লাগবে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। তাই বলা যাচ্ছে না।’

প্রসঙ্গত, গত বছর ৪ নভেম্বর এক সভায় শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ক্রয়ে সুদবিহীন ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। সভায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সফট লোন অনুমোদন কমিটির সুপারিশের আলোকে শিক্ষার্থীদেরকে অনধিক আট হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিংবা অধ্যয়নকালীন চারটি সমান কিস্তিতে বা এককালীন তাঁরা এই ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।

ব্যর্থ হচ্ছে সফট লোনের উদ্দেশ্য?
করোনা মহামারিতে অনলাইনে শ্রেণী-কার্যক্রমে অংশগ্রহণের নিমিত্তে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ক্রয়ের জন্য সুদবিহীন সফট লোন দেওয়ার ঘোষণা করা হয় গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে। অথচ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হতে চললেও জাবি শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি লোনের অর্থ। ফলে অনেকেই অংশ নিতে পারছেনা অনলাইন ক্লাসে। এতে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে একাডেমিকভাবে।

সফট লোনের জন্য আবেদনকারী সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রথমে বলা হলো দ্রতই এ লোন দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো লোনের অর্থ হাতে আসেনি। যার কারণে ফোনও ক্রয় করা হয়নি। ফলে ক্লাসেও এটেন্ড থাকতে পারছিনা। অনলাইনে আমার জন্য ক্লাসও থেমে নেই। এতে একাডেমিক্যালি পিছিয়ে পড়ছি আমি।


সর্বশেষ সংবাদ