নামটা ‘মল চত্বর’ হলো কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন অনেকগুলো চত্বরের সমন্বিত রূপ। এক চত্বর থেকে কয়েক কদম হাটলেই নিজেকে আবিষ্কার করতে হয় অন্য এক চত্বরে। কেউ প্রথমবার ক্যাম্পাসে আসলে এতো নামের চত্বর দেখে দ্বিধায় পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। মল চত্বর, হাকিম চত্বর, মিলন চত্বর, ডাস চত্বর, ভিসি চত্বর, দোয়েল চত্বর, সমাজবিজ্ঞান চত্বর প্রভৃতি নামের চত্বরের ছড়াছড়ি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে এসব চত্বরের নামকরণের বিভিন্ন  ইতিহাস।

কলাভবন আর রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত মল চত্বর যেন সবারই চেনা! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ছাত্রছাত্রী খুঁজে পাওয়া মুশকিল যে কি-না মল চত্বর একেবারেই চেনেন না। তবে এই চত্বরের নাম কেনই বা মল চত্বর রাখা হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে অনেক দ্বিমত। কেউ কেউ বলেন, এখানে এক সময় অনেক ময়লা ফেলা হতো এজন্য এর নাম রাখা হয়েছে মল চত্বর। আবার অনেকের মতে, সকালবেলা এখানে কাকের মল ছাড়া অন্যকিছু চিন্তা করা যায় না তাই এর এমন নামকরণ।

মল চত্বরের সৌন্দর্য: সংগৃহীত ছবি

তবে নাম নিয়ে যত দ্বন্দ্বই থাকুক না কেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সকল ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে ভালোবাসার চত্বর যে এই মল চত্বর তা নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই কারও মাঝেই। সন্ধ্যার পর মল চত্বরে গেলে দেখা যায়, অনেক গানের আসর জমেছে। হলের ছাত্রছাত্রীরা গিটার বাজিয়ে কিংবা খালি গলায় গান গেয়ে সারারাত মুখরিত করে রাখে চত্বরের পরিবেশ। তাই সব চত্বরকে ছাপিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে বর্তমানে মল চত্বরই একটু বেশি আকর্ষণীয়।

এ জায়গাটার এরূপ নামকরনের প্রকৃত সত্যটা হলো, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সাবেক ফরাসী সংস্কৃতি মন্ত্রী আন্দ্রে মারলোর সম্মানার্থে ঢাবিতে একটি চত্বরের নামকরণ করা হয়। তখন সেটির নাম ছিল মারলো চত্বর। কালক্রমে এটিই বিকৃত হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মল’ নামে। হয়তো শিক্ষার্থীদের অনেকে জানেও না- আদৌতে না একজন সম্মানিত ব্যক্তির নাম ছিল। মহান ব্যক্তির স্মরণে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ চত্বরে মালরো বাগান নামে একটি বাগানের নামকরণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ঢাকা এ অঞ্চলটি অবস্থানগত কারণেই সকলের নিকট খুবই পরিচিত। দিনের বেলায় ক্রিকেট আর রাতের বেলা চাঁদ ও বৈদ্যুতিক আলোর নিচে জমে ফুটবলের আসর। ঢাবির ছাত্র/ছাত্রী পরিবহনকারী বাসের চলাচলে এর রাস্তাগুলো সর্বদা থাকেই ব্যস্ত।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করাসহ মুজিববর্ষ উপলক্ষে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘মল চত্বর’ এ বঙ্গবন্ধুর পূর্ণাঙ্গ ভাস্কর্য স্থাপন করা।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ইউরোপে বাংলাদেশের বড় শুভাকাঙ্ক্ষি ফরাসি দার্শনিক আঁদ্রে মালরো ১৯৭৩ সালের ২০ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আন্দ্রে মারলো গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন। এমনকি তিনি মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে শরিক হতে ১৫০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন। তবে ’৭১-এ তার বাংলাদেশে আসা হয়নি। পরে ১৯৭৩ সালে তাকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বীরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

আন্দ্রে মালরো সারা জীবন সাম্য ও মুক্তির পক্ষে ছিলেন তা নয়, সরাসরি যুদ্ধও করেছিলেন মুক্তির পক্ষে। ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় মালরো একাই সারা ফ্রান্সে সাংস্কৃতি আন্দোলন গড়ে বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের যোদ্ধাদের গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করার উপদেশ দিয়েছিলেন।

পড়ুন: অপরাজেয় বাংলা: ঠাঁই দাঁড়িয়ে কে এই তিন ব্যক্তি

শুকনো মৌসুম তো বটেই, তবে বর্ষাকালে ‘মল চত্বর’ যেন তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়। এ মনোরম দৃশ্য দেখতে ছুটির দিনে ছুটে চলে আসে দর্শনার্থীরা।কৃষ্ণচূড়ার গন্ধ, সুভাষে মুখরিত থাকে ‘মল চত্বর’। কবির ভাষায়-

‘ফুটুক না কৃষ্ণচূড়া, ছুঁয়ে দিক মন
জেগে উঠুক ভালোবাসার বন্ধন।

এ দৃশ্য আমাদের হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে, মনকে করে আন্দোলিত। ফিরে পাই নিজস্ব যৌবন আর প্রেম, ভালোবাসা।’ কাফাশ মুনহামাননা নামক এক কবি তার ‘মায়াবতী’ কবিতায় কত সুন্দর করে বলেছেন যা পাঠককে বিমোহিত করে,

তোমার দু’চোখের নীড়
আমার মতো আনাড়ির জন্য উপযুক্ত আশ্রয়
সর্বত্র জুড়ে যার মায়াবতীর মায়াময় কারুকাজ
ভালোবাসি তোমায়, খুব ভালোবাসি।

চাতকের একফোটা বৃষ্টির মতো
তোমাকে দেখার জন্য রোজ নির্বিঘ্নে ছুটে যাই -
মল চত্বর, ভিসি চত্বর, শহীদ মিনার, কার্জন হল
কখনো বা টিএসসি'র হলদে-সবুজ আঙিনায়
তোমার বিমোহিত সুবাস যে মিশে আছে কোণায় কোণায়।

বসন্তকালে যখন প্রকৃতি নতুন সাজে সজ্জিত হয়। তখন উপর দিক থেকে ‘মল চত্বর’র দিকে তাকালে মনে হয় লাল সবুজের রং মিশ্রিত পতাকা খঁচিত বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence