জাবিতে স্টুডেন্টস ফর জাস্টিসের ৩ দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা

জাবিতে স্টুডেন্টস ফর জাস্টিসের আন্দোলনের ঘোষণা
জাবিতে স্টুডেন্টস ফর জাস্টিসের আন্দোলনের ঘোষণা  © টিডিসি ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস’ প্রশাসনের ওপর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ৩ দফা দাবি উত্থাপন করে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)-তে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই আন্দোলনের ঘোষণা দেয় প্ল্যাটফর্মটি।

সংবাদ সম্মেলনে প্ল্যাটফর্মটি সংগঠকরা জানান, ‘স্বৈরাচার সরকার পতনের দেড় বছর পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।‘

তারা আরও জানায়, ‘মৌলিক নীতিগত সংস্কার, শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো এবং অ্যাকাডেমিক পরিবেশ—কোনো ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে পারেনি বর্তমান প্রশাসন।” 

নতুন প্ল্যাটফর্মটির অভিযোগ, ‘ জুলাই-২৪ এর গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রশাসন পূর্ববর্তী বিতর্কিত প্রশাসনের ‘কার্বন কপি’ হয়ে রয়ে গেছে।‘

সংগঠকদের দাবি, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্ষমতাসীন প্রশাসনের সহযোগীরা এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন, ফলে অ্যাকাডেমিক নিপীড়ন, গবেষণা জালিয়াতি, ফলাফল বিকৃতি এবং যৌন নিপীড়নের মতো গুরুতর অভিযোগগুলো মাসের পর মাস বিচারহীনই থেকে যাচ্ছে।‘

জাকসুর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে সংগঠনটি দাবি করে যে, ‘প্রশাসন জাকসুকে ‘গদি রক্ষায় ঢাল হিসেবে’ ব্যবহার করছে, অথচ অধিকাংশ জাকসু প্রতিনিধিই শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার বদলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত।‘

এসময় প্লাটফর্‌মটি ৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেছ। দাবিগুলো হলো–জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। গবেষণা ও ফলাফল জালিয়াতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বশেষ দাবি যৌন নিপীড়নবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা এবং কঠোর শাস্তিবিধান নিশ্চিত করতে হবে।

সম্মেলনে আরও অভিযোগ করে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, হত্যাচেষ্টা, যৌন নিপীড়ন, গবেষণা জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগে বহু লিখিত অভিযোগ প্রশাসনের কাছে জমা পড়লেও তদন্ত প্রক্রিয়ায় ‘কৃত্রিম দীর্ঘসূত্রিতা’ তৈরি করা হচ্ছে।‘

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সংগঠকেরা সতর্ক করে বলেন, ‘প্রশাসন অভিযোগগুলো দ্রুত আমলে নিয়ে যথাসময়ে তদন্ত শেষ করে বিচারিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় প্রশাসনের ব্যর্থতা স্পষ্ট হবে, এবং এমন প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে দেখতে চাই না।‘

এসময় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ ব্যাচে একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষক বানানোর জন্য অন্য সবার রেজাল্ট কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা আরও দেখেছি ‘আইন ও বিচার‘ বিভাগের সবার রেজাল্ট কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেটি সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছিল।‘

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে রেজাল্ট জালিয়াতি করা হয়েছিল। পরে রেজাল্ট পুনর্মূল্যায়ন করে ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে। এসব আরও অসংখ্য বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো ছড়িয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসকল অসঙ্গতি ও অ্যাকাডেমিক নিপীড়নের বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।‘

উল্লেখ্য, ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস‘ জানায়, অ্যাকাডেমিক নিপীড়ন প্রতিরোধ, ছাত্র–শিক্ষকদের সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। 

এছাড়াও সংগঠনটি দল–মত নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ