ঢাবিতে ‘পচা খাবারের দোকানে’ তালা দেওয়ায় জুনিয়র কর্মকর্তাকে শাসালেন সিনিয়র কর্মকর্তা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৫ AM , আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:০৪ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাকিম চত্বরে অবস্থিত জাকিরের দোকানে (মাঝখানের দোকান) মরা ও পচা মুরগির হালিম বিক্রির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে দোকানটি সাময়িকভাবে বন্ধ (তালা দেওয়া) করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনার পর বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এরই জেরে দলবল নিয়ে ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সিকিউরিটি অফিসার মুনির হোসেনকে শাসালেন রেজিস্ট্রার ভবনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা। এসময় তাকে হুমকি-ধমকি, শাসানো ও লাঞ্ছিত করেছেন সিনিয়র ওই কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার নাম নামজুন নাহার নয়ন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে হিসাব পরিচালকের অফিসের উপ-হিসাব পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া ওই দোকানের মালিক এই কর্মকর্তার পরিচিত। এ কারণে দলবল নিয়ে নয়ন রেজিস্ট্রার ভবনের এস্টেট অফিসের সিকিউরিটি অফিসার মুনির হোসেনকে হুমকি-ধমকি, শাসানো ও লাঞ্ছিত করেছেন তিনি।
জানা যায়, নয়নের স্বামী হিসাব পরিচালকের অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। একই দপ্তরে কর্মরত স্বামী ও স্ত্রী। যা রেজিস্ট্রার ভবনে নজিরবিহীন বলছে সংশ্লিষ্টরা।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মোস্তফা জতিড় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুজন সহকারী প্রক্টর ও ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক যুবায়ের বিন নেছারী এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের ডেকে তাদের বক্তব্য শুনেছেন। তবে এতে নয়ন অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে প্রক্টর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আজকে দুজন সহকারী প্রক্টর ও ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসেছিলেন।
আরও পড়ুন: নীলক্ষেতে ছাপা হয় ব্যালট, অভিযোগ গুরুত্বসহ তদন্ত করছে কমিশন
জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হল ছাত্রসংসদের ভিপি মাহবুব তালুকদারসহ কয়েকজন হাকিম চত্বরের ওই দোকানে হালিম খেতে যান। তারা হালিমে মুরগির পচা মাংসের টুকরা পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে তারা দোকানের ম্যানেজারকে সেই হালিম খেতে বলেন। দোকানের ম্যানেজারও সেটি মুখে নিয়ে ফেলে দেন। তিনি স্বীকার করেন, হালিমে ব্যবহৃত মাংসে সমস্যা আছে।
ম্যানেজার শিক্ষার্থীদের বলেন, আমরা বুঝতে পারিনি এ মাংসে সমস্যা আছে। বিষয়টি তখন প্রক্টর অফিস পর্যন্ত গড়ায়। দোকানের ম্যানেজারকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রক্টর অফিসে যান এবং পচা মাংসের বিষয়ে অভিযোগ দেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদের নির্দেশে সিকিউরিটি অফিসার মুনির প্রক্টর অফিসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘটনা অবহিত হন। দোকানের ম্যানেজারের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। দোকানের ম্যানেজার হালিমে ব্যবহৃত মাংস নষ্ট ছিল বলে স্বীকার করেন।
সিকিউরিটি অফিসার জানান, যেহেতু আপনি অপরাধ স্বীকার করেছেন, সেহেতু প্রক্টর স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার দোকানটিতে সাময়িক সময়ের জন্য তালা দেওয়া হবে এবং হালিমের নমুনা ল্যাবরেটরি টেস্টের জন্য পাঠানো হবে। এরপর প্রক্টরিয়াল টিমসহ সিকিউরিটি অফিসার গিয়ে দোকানটিতে তালা দেন। কিন্তু দোকানে প্রশাসনের উপস্থিতির আগেই দোকানের কর্মচারীরা হালিমের পাতিল ফাঁকা করে ফেলেন, যে কারণে কোনো নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি।
তবে প্রক্টরিয়াল টিম দোকানটি অস্বাস্থ্যকর দেখতে পায় এবং অন্যান্য মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে। তারা আরো দেখতে পান, দোকানে ডিপ ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।
মঙ্গলবারের এই পদক্ষেপের পরদিন বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের এস্টেট অফিসে যান ঢাবির হিসাব পরিচালকের দপ্তরের উপ-হিসাব পরিচালক নাজমুন নাহার নয়ন ও দোকানের বরাদ্দপ্রাপ্ত মালিক দলবল নিয়ে যান। এ সময় তারা সিকিউরিটি অফিসারকে হেনস্তা করে হুমকি দেন বলে অভিযোগ এসেছে।
এ সময় উপ-হিসাব পরিচালক ধমকের সুরে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন। তিনি জানতে চান, সিকিউরিটি অফিসার মনির কে, দোকানে তালা দেওয়া হয়েছে কেন, দোকানের কর্মচারীদের বকাঝকা করা হয়েছে কেন?
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মোস্তফা উপস্থিত হলে নয়নকে বলেন, আপনি আমার অফিসারের সঙ্গে এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার কোনো ইস্যু থাকলে সেটি আমার রুমে গিয়ে আমাকে বলেন। এভাবে আপনি হুমকি-ধমকি দিতে পারেন না। তখন নয়ন এস্টেট ম্যানেজারের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তার উদ্দেশে তারা বলেন, তার অফিসার জানেন না, দোকানটা কার? কেন তিনি দোকানে তালা দিয়েছেন?
এস্টেট ম্যানেজারের কাছেও দোকানে তালা দেওয়ার বিষয়ে তারা জানতে চান ও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। এস্টেট ম্যানেজার তখনও তাদের বলেন, আপনারা আমার রুমে যান, কোনো বিষয় থাকলে আমি শুনব। এখানে শাউট করবেন না।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মোস্তফা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাজনৈতিক পেশি শক্তি ব্যবহার করে এক দপ্তরের কমকর্তা অপর দপ্তরের কর্মকর্তাকে গালিগালাজ কীভাবে করলো সেটা আমার বুঝে আসে না। দোকানি ছাত্রদের পচা মাংস খাওয়াচ্ছে সে জন্য আমার অফিসার ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন তদন্ত হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কার বন্ধু-বান্ধবীর দোকান সেটা দেখা হবে না। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
তবে সিকিউরিটি অফিসারকে তার দপ্তরের গিয়ে হুমকি ধমকি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত উপ-হিসাব পরিচালক নাজমুন নাহার নয়ন। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ওই সময় এ ধরনের কোনো সিনক্রিয়েট হয়নি।
জানতে চাইলে সিকিউরিটি অফিসার মুনির হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দোকানটিতে নষ্ট মাংস দিয়ে হালিম রান্না করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। যেটি দোকানটির ম্যানেজার আমাদের কাছেও স্বীকার করেছেন। যার প্রেক্ষিতে প্রক্টর স্যারের নির্দেশে দোকানটিতে তালা দেয়া হয়।