জাকসুর ফলাফলে খুশিতে কাঁদলেন জাবি অধ্যাপক, ‘মোনাফিক’ বললেন সাবেক শিক্ষার্থী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩২ PM , আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:০৯ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক। ভোটের দুই দিন পর ঘোষিত ফলাফলে অধিকাংশ পদে জয়ী হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ফলাফল প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার লুৎফুল এলাহী আনন্দে কেঁদে ফেলেন। বয়োজ্যেষ্ঠ এই শিক্ষকের কান্নার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। তবে তার এই কান্নাকে ‘মোনাফিক আচরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এক সাবেক শিক্ষার্থী ও জাপানের সাগা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক লিখন মাহমুদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড. লুৎফুল এলাহী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ঐতিহাসিক ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি শিক্ষক রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রবাসী গবেষক ও জাপানের সাগা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক লিখন মাহমুদ ফেসবুকে ড. লুৎফুল এলাহীর কান্নারত ছবি শেয়ার করেন এবং এ নিয়ে দীর্ঘ মন্তব্য লিখেন। তার স্ট্যাটাস ইতিমধ্যে অসংখ্য মানুষ শেয়ার দিয়েছেন।
তিনি লেখেন, “ছবিতে যাকে দেখছেন, তিনি জাবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক লুৎফুল এলাহী। জাকসুর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য। তিনি আবার আওয়ামী শিক্ষক পরিষদের সদস্য-সচিবও ছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো—তিনি কি জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে গুপ্ত অবস্থায় ছিলেন? তা আমরা জানি না। সেটাই আজকে বোঝার চেষ্টা করব।”
আরও লিখেছেন, “জাকসুর ফলাফল ঘোষণার পর তিনি ডুকরে কেঁদে ফেললেন। এ কান্না কিন্তু বেদনার নয়, সুখের কান্না। কেন? বলছি। লুৎফুল এলাহীর মতো অনেকে দীর্ঘ সময় নিজেদের আড়াল করে রেখেছিলেন—কখনও আওয়ামী লীগে, কখনও বিএনপিতে। তবে আসল পরিচয় গোপন রেখেই ছিলেন। আজকের এই দিনে তাদের জন্য সেটাই মুক্তির মুহূর্ত।”
তিনি ব্যাখ্যা দেন, “মনোবিজ্ঞানে একে বলে release of psychological pressure। দীর্ঘ সময় নিজের ভেতরের পরিচয় লুকিয়ে রাখলে মানুষ মানসিক কারাগারে বন্দি হয়ে পড়ে। প্রতিটি মুহূর্তে এলার্ট থাকতে হয়—কে কী দেখল, কে কী শুনল, আমি কোন দলে আছি, কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। এই টেনশনে জীবনযাপন করা মানেই প্রতিদিনের এক যুদ্ধ। অবশেষে যখন নিজের সত্যিকারের পরিচয় প্রকাশ করা যায়, তখন চোখে জল আসে। সেই জল মুক্তির জল, স্বস্তির জল। ঠিক তেমনি লুৎফুল এলাহীর চোখের জলও আজ সেই মুক্তির জল।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আজ তার বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার দিন, এসাইনমেন্ট সফল হওয়ার দিন। যদি তিনি সত্যিকারের আওয়ামী সমর্থক হতেন, তবে কান্নার প্রশ্নই আসত না। এতদিনের দ্বন্দ্ব-সংকটে জর্জরিত এক মানুষের কাছে কান্নাই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।”
শেষে লিখন মাহমুদ বলেন, “জাকসুর ইতিহাসের কলঙ্কতম দিনে তিনি নিজেই নিজের মুখোশ উন্মোচন করেছেন অজান্তেই। ধন্যবাদ দিয়ে আপনাদের ছোট করব না, গালিও দেব না। শুধু বলব—মোনাফিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন যদি এভাবে ডুকরে কেঁদে ওঠেন, তবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।”