ডাকসু নির্বাচন

রিট আবেদনকারী নারী প্রার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি, ঢাবি ছাত্রের স্ট্যাটাস ভাইরাল

স্ট্যাটাস ভাইরাল
স্ট্যাটাস ভাইরাল  © টিডিসি সম্পাদিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে রিট আবেদন করেছেন বামজোট মনোনীত ‘অপরাজেয় ৭১’, ‘অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম। সেই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ডাকসুর নির্বাচন প্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকার কার্যক্রম আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন। পরে বিকেলে নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

এদিকে, বিকেলে রিট আবেদনকারী এই নারী প্রার্থীকে নিয়ে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দিয়ে আলী হুসেন নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। পরে এই ব্যক্তি ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করেন বলে দাবি করে ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার শাস্তি চেয়েছেন। তবে ছাত্রশিবির দাবি করছে, এটা তাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা। ছাত্রশিবিরের সঙ্গে এই ছেলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আলোচনা-সমালোচনার মুখে ফেসবুকে লাইভে এসেও এই ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি কোনো দলের সঙ্গে জড়িত নয়।

জানা গেছে, আলী হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী, থাকেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। জানতে চাইলে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফারুক শাহ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছেলেটা আমাদের হলের। তার বিরুদ্ধে এরকম একটি তথ্য পেয়েছি। তবে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।

জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কাইয়ুম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলছেন, এই ছেলে ছাত্রশিবিরের কেউ না। এমনকি তিনি চেনেন না বলেও দাবি করেন।

আলোচনা-সমালোচনার মুখে রাতে ফেসবুকের এক লাইভে এসে আলী হুসেন বলেন, বিকালের আমার পোস্টের জন্য সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি কোনো দলের সাথে যুক্ত নয়। আমি কখনও ছাত্রশিবির করিনি।

এর আগে ভাইরাল হওয়া স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, হাইকোর্টের বিপক্ষে এখন আন্দোলন না করে আগে একে গণধর্ষণের পদযাত্রা করা উচিত! কেউ এসব শব্দচয়ন দেখে সুশীল হবেন না। যে একে সাপোর্ট করবে উপরের কথাটা তার জন্যও প্রযোজ্য।

ছাত্রশিবিরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে লেখেন, রাজনৈতিক এবং আদর্শিক মতবিরোধ থাকবে কিন্তু সেটাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে কাউকে আক্রমণ করা বা ধর্ষণের হুমকি দেওয়া জঘন্য অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ থাকবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের। যে শিক্ষার্থী আমার সাথে প্রচণ্ড মাত্রায় দ্বিমত কিংবা বিরোধিতা করবেন; তার জন্যও আমরা ইনসাফ কায়েম করবো-এটিই আমাদের লড়াইয়ের মূল মাকসাদ। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এসেছে সে ছাত্রশিবিরের সাথে জড়িত নয়। যারা এটার সাথে জড়িয়ে ছাত্রশিবির নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো, ইনশাআল্লাহ।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের মানসুরা আলম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ফাহমিদা আলমকে গণধর্ষণের হুমকিদাতা আলী হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের নেতা। সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ২০২০-২১ সেশন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ জেলা: গোয়াইনঘাট, সিলেট। শুধুমাত্র মতের ভিন্নতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন ছাত্রশিবির নেতা গণধর্ষণের পদযাত্রা করতে চায়। এদের চরিত্র বের হয়ে আসছে। এরকম ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো অনেক আছে। কয়েকদিন আগে ডাকসু প্রার্থী সীমা আক্তার এবং আগে ছাত্রনেত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন বাজে কমেন্টও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা করে এসেছে। একবার ভাবেন এরা ক্ষমতা পেলে কি কি করতে পারে! ৩৬ পৃষ্ঠা ভিসি যদি এই ছেলের ছাত্রত্ব বাতিল না করে তাহলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। নারীর সম্মান রক্ষা প্রশ্নে কোনো আপস নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ফেসবুকের এক পোস্টে লিখেন, আপনার অপছব্দ হলেও ফাহমিদার অধিকার আছে রিট করার। কিন্তু সেজন্য তাকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অধিকার নাই আলী হুসেনের। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে সেটাও হতে হবে ডিউ প্রসেসে। এটা 'সুশীলগিরি' হলে আমি সুশীল! লাউড এন্ড ক্লিয়ার!

তিনি আরও লেখেন, এডিট: কোনো নারীর মত প্রকাশের ধরণ পছন্দ না হলেই তার উপরে যে আক্রমণ শুরু হয় তার একটা অন্যতম অংশ আসে বট লীগ আর আল বটর বাহিনী থেকে। আর আসে আফসোস লীগ আর জাশি থেকে। এরা মানুষকে নোংরা গালাগাল করতে এবং হুমকি দিতে ওস্তাদ। সকালে খাই লীগারদের থ্রেট আর সন্ধ্যায় জাশির। নিজের ছাত্রকে নিয়ে আর কী লিখবো। সে সুশীলগিরি দেখাতে না করেছে সেই সুশীলগিরিই দেখাইলাম। 

এই অধ্যাপক লেখেন, আরো এডিট: সে বলেছে ফাহমিদাকে যে সাপোর্ট করবে তাদের জন্যও সে একই দাওয়াই প্রস্তাব করছে। যারা আলী হুসেনের মতামত এ বিশ্বাস করেন এবং সমাজবিজ্ঞান পড়েও মনে করেন যে কোনো মানুষকে গণধর্ষণের হুমকি দেয়া যায় অকাতরে তারা আর আমার ক্লাসে বসার চেষ্টা করবেন না। আমি আপনাদের পড়াবো না।


সর্বশেষ সংবাদ