চাকসু নির্বাচন
পক্ষপাতমূলক আচরণ বলল ছাত্রদল, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি রেজিস্ট্রারের
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৫ PM , আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৩:০৭ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (চবি) গঠনতন্ত্র সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের অব্যাহতির দাবি করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে শাখা ছাত্রদল। তবে, নির্বাচনের কোনো কার্যক্রমে না থেকেও অব্যাহতির বিষয়ে ছাত্রদলের এমন বক্তব্য মানহানিকর দাবি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সংগঠনটির চাকসু সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকলে এমন বক্তব্য দিতো না। চাকসু ছাত্রদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিন্তু এটা সম্পর্কে তারা ধারণা রাখে না। ছাত্রদল কাল্পনিকভাবে একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছে যেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। একজন মানুষ যদি কমিটিতে থাকে তাহলে তাঁর অব্যাহতির প্রশ্ন উঠতে পারে আমি যেখানে কমিটিতেই নেই সেখানে অব্যাহতির বিষয় কিভাবে আসবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য আমাকে বারবার বলেছেন চাকসু নির্বাচন কমিটিতে কাজ করতে কিন্তু আমি রাজি হয়নি। কেননা রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চাকসু নিয়ে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তারা যেটা করেছে এতে আমার মানহানি হয়েছে। আমি আইনজীবীর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে আজ দুপুরে গঠনতন্ত্র সংস্কার ও প্রক্টর- রেজিস্ট্রারের অব্যাহতি চেয়ে ছাত্রদল স্মারকলিপি দেয়। এতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত প্রশাসন কালক্ষেপণ করে তফসিল ঘোষণা করতে পারেনি, যা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত চাকসুর গঠনতন্ত্রে কিছু অসঙ্গতি, অস্পষ্টতা, এমফিল-পিএইচডির সংযুক্তি এবং নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ধারা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। একটি কার্যকর চাকসু গঠনের স্বার্থে সকল অংশীজন ও শিক্ষার্থীদের মতামত অনুযায়ী নির্বাচনের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে কেবল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদেরই রাখতে হবে। বয়সসীমা ৩০ বছর প্রত্যাহার করে এমফিল-পিএইচডি শিক্ষার্থীদের প্রার্থীতার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে দপ্তর সম্পাদক ও সহ-দপ্তর সম্পাদক পদ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট কাজের অভিযোগ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের কর্মকাণ্ডে দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। বর্তমান চবি প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রক্টর একটি ছাত্র সংগঠনকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে অন্যদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন। ছাত্র প্রতিনিধির নামে নিজের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্র সংগঠনের নেতাদের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব দিয়েছেন। তাছাড়া নানা সময়ে তিনি ঐ ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্রের মতো আচরণ করেছেন। গত কয়েক মাসে তিনি তার পছন্দের ছাত্র সংগঠনের হয়ে নানা স্থানে ক্যাম্পেইন চালিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারও তার কর্মকাণ্ডে দলীয় পক্ষপাতমূলক আচরণ ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রক্টরের নারী বিদ্বেষী মনোভাব, বিতর্কিত ভূমিকা এবং প্রকাশ্য দলবাজি একটি সুষ্ঠু চাকসু নির্বাচনের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই চবি ছাত্রদল মনে করে, শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ চাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারকে নির্বাচনী কার্যক্রমের সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন।
রেজিস্ট্রার নির্বাচনের কোনো কার্যক্রমে না থেকেও কিভাবে অব্যাহতি হবে এবিষয়ে জানতে চাইলে চবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দীন মহসিন বলেন, আসলে আমরা জানি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে রেজিস্ট্রার প্রধান থাকেন। সেই ধারণা করে আমরা তাঁর অব্যাহতি চেয়েছি। তিনি যদি না থাকেন তাহলে প্রক্টর স্যার তো আছেন, তিনিও পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। আমরা তাঁরও অব্যাহতি চেয়েছি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়বার নির্বাচনের আয়োজন করতে পেরেছে প্রশাসন। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।