আবু বকর হত্যার ন্যায়বিচার চেয়ে ফের আদালতে ঢাবি, আইনজীবী শিশির মনির

ঢাবি ছাত্র আবু বকর (ডানে) হত্যা মামলায় আইনজীবী হিসেবে লড়বেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির (বাঁয়ে)
ঢাবি ছাত্র আবু বকর (ডানে) হত্যা মামলায় আইনজীবী হিসেবে লড়বেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির (বাঁয়ে)  © সম্পাদিত

২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় হলের নিজ কক্ষে ছিলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আবু বকর সিদ্দিক। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুরুতর আহত হন তিনি। ৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আজ (৩ জানুয়ারি) আবু বকরের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। এরইমধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে নতুন প্রশাসন। ফলে আবু বকর হত্যায় ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছে প্রশাসন। ফের আদালতে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আবু বকরের স্মরণে আজ (৩ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় হল প্রাঙ্গণে স্মরণসভারও আয়োজন করা হয়েছে।

২০১০ সালের ২ মার্চ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ১০ ছাত্রকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত ছাত্রদের মধ্য থেকে দু’জন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে পৃথক রিট দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে বহিষ্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা করে বাদীদের পক্ষে রায় দেন আদালত।

জানা গেছে, সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১০ সালের ২ মার্চ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ১০ ছাত্রকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত ছাত্রদের মধ্য থেকে দু’জন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে পৃথক রিট দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে বহিষ্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা করে বাদীদের পক্ষে রায় দেন আদালত।

হাইকোর্টের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ইতোমধ্যে অ্যাডভোকেট শিশির মনিরকে আইনজীবী নিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দীন এ তথ্য জানিয়েছেন।

মুনসী শামস উদ্দীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে আপিল করেছে। সেটি আপিল বিভাগে প্রক্রিয়াধীন আছে। এখনো শুনানির পর্যায়ে যায়নি। তবে প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েছে। 

আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘১ জানুয়ারি আমার কাছে ফাইল পাঠিয়েছেন তারা। আমি সেটি দেখব। বিস্তারিত দেখে তারপর অগ্রসর হব।’

হলে মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দাবি
গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) শহীদ আবু বকরের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রাধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দেন স্যার এএফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। স্মারকলিপিতে তারা লেখেন, ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে স্যার এ এফ রহসান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আবু বকর। 

দু’দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ৩ ফেব্রুয়ারি শাহাদত বরণ করেন তিনি। এক দশক পেরোতেই আবু বকর যেন হারিয়ে গেছে। হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে শহীদ আবু বকরের মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জোর দাবি জানান তারা। স্মারকলিপিতে তারা আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের প্রস্তাব দেন।

আরো পড়ুন: মেডিকেল ভর্তি: কোটায় উত্তীর্ণদের ভর্তি স্থগিত থাকবে

হলের আবাসিক ছাত্র ইংরেজি বিভাগের রায়হান উদ্দীন বলেন, আবু বকর হত্যা ফ্যাসিবাদ আমলের জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোয় মূলত ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র যে আধিপত্য, তার যাত্রা শুরু হয়েছিল। ফ্যাসিবাদ পরবর্তী সময়ে শহীদ আবু বকরের ত্যাগকে যথাযথ সম্মানপূর্বক স্মরণ করা উচিৎ। হল প্রশাসন থেকে তার স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করা উচিত।

আলোচনার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোয় হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজত্বের বিষয়টি পর্যালোচনা করার এখনি সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, হল প্রশাসন এবং শহীদ আবু বকর স্মৃতি ফাউন্ডেশন যৌথভাবে উদ্যোগগুলো নিক। তাকে স্মরণ এবং হত্যার সুষ্ঠু বিচারের মধ্য দিয়ে তার প্রতি আমাদের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতে চাই।

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, ‘আমার ছাত্ররা আমাকে একটা স্মারকলিপি দিয়েছে। আমরা আজ সন্ধ্যায় আলোচনা সভা করব। আমরাও আবু বকর হত্যার ন্যায়বিচার চাই।’


সর্বশেষ সংবাদ