জাবি সিন্ডিকেটে শিবির নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল, কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়নি: উপ-উপাচার্য

জাবি ও শিবিরের লোগো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহফুজর রহমান
জাবি ও শিবিরের লোগো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহফুজর রহমান  © সম্পাদিত

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পর প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এ ছাত্রসংগঠন জাবিতে নিষিদ্ধ বলে জানতেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তবে জাবিতে ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একই দাবি করেছেন শাখা ছাত্রশিবিরের বিবৃতিতেও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহফুজর রহমান বলেন, ‘ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল, কিন্তু তখন তৎকালীন সিন্ডিকেট মিটিংয়ের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত’ বিধায় এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ সম্ভব নয়। 

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের ন্যায় তাঁরাও সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চার রাজনীতি করতে পারে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিবন্ধকতা নাই। তবে রাজনীতি সহাবস্থানের ও সুস্থ ধারার হতে হবে’—অভিমত জানান তিনি।

আরও পড়ুন: জাবিতে শিবিরবিরোধী মিছিলকে স্বাগত জানালো শিবির

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির সভাপতি ও সেক্রেটারির নাম জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের (২০১৬-১৭ সেশন) শিক্ষার্থী জাবি শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের (২০১৭-১৮ সেশন) শিক্ষার্থী মহিবুর রহমান মুহিব সেক্রেটারি।

অন্যদিকে সংগঠনটি প্রকাশ্য আসায় গতকাল রাতেই বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের একাংশ। তাদের দাবি—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৯ সাল থেকে ছাত্রশিবিরের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪২তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করা হয় বলে দাবি তাদের।

আরও পড়ুন: জাবিতে গাঁজা সেবনরত অবস্থায় দুই নারী শিক্ষার্থীকে আটক

তবে ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা। বিষয়টি নিয়ে একটি বিবৃতিতে তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের একটি বয়ান তৈরি করে এসেছে। আদতে এই বয়ানের কোনো সত্যতা নেই। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা এলেও এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।’

বরং সভার সিদ্ধান্ত ছিল ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়’ উল্লেখ করা হয়েছে একই বিবৃতিতে।

এর আগে বিগত ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট ছাত্রশিবিরের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবির আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছর ২৬ আগস্ট মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে জাবিতে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।

আরও পড়ুন: জাবিতে শিবিরের আত্মপ্রকাশ, প্রতিবাদে মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল

এর প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের সব ছাত্র সংগঠন ‘সর্বদলীয় ঐক্য’ গঠন করে শিবিরকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে। তখন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, জাবি সাংস্কৃতিক জোটসহ ক্যাম্পাসের সব সংগঠন মিলে শিবিরের বিরুদ্ধে সেই ‘সর্বদলীয় ঐক্য’ গড়ে তোলে।

এরপর ১৯৮৯ সালে জাবির ১৪২তম সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপিত দাবিসমূহে শিবির নিষিদ্ধের দাবি ছিল। ওই সিন্ডিকেটের সভার ৩ নম্বর দাবিতে তখন বলা হয়েছিল, ‘ছাত্রশিবির নামধারী সশস্ত্র ফ্যাসিস্ট সংগঠনটির রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিত হইবে।’

তখন এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়।’


সর্বশেষ সংবাদ